বিশেষ লেখা
আগেই চলে গেলেন

গোলাম সারওয়ার টিপু
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২০ | ১২:০০
ম্যারাডোনা মানেই খবর। ম্যারাডোনা মানেই ফুটবলপ্রেমের জোয়ারে ভাসা। যুগে যুগে এক-একজন আসে, ফুটবলকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। আশির দশকে ম্যারাডোনা ফুটবলের জনপ্রিয়তাকে হিমালয়সম উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। '৮৬ সালে ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ জয় ও জাদুকরী খেলা দেখার পর বিশ্বজুড়ে ফুটবলের সমর্থক বেড়েছে হু হু করে। এর আগে অনেকে ফুটবল তেমনভাবে হয়তো দেখতেন না।
'৮৬ সালের বিশ্বকাপে মহানায়কের উত্থানে ফুটবলপ্রেমীর সংখ্যাও বেড়ে গেছে। প্রতি শতাব্দীতে এ রকম দু-একজন কিংবদন্তি জন্ম নেন, যারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে স্থায়ী প্রভাব ও ছাপ রেখে যান। ম্যারাডোনা তেমনই একজন ফুটবল কিং।
ব্রাজিলকে বিশ্বের কাছে পরিচিতি দিয়েছেন পেলে। আমি ঢাকা লিগে খেলেছি ১৯৬৩ সাল থেকে। তখন শুধু পেলে ও ব্রাজিলের নাম শুনতাম। সর্বত্র ব্রাজিলের ফুটবলারদের নিয়ে কথা হতো। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা পরিচিতি পেয়েছে ম্যারাডোনার কৃতিত্বে। আর্জেন্টিনা প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছিল '৭৮ সালে। সে জয় কতটুকুই বা ছাপ ফেলতে পেরেছে। '৮৬-এর বিশ্বকাপ জিতে বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় আর্জেন্টিনাকে নিয়ে এলেন ম্যারাডোনা। বাংলাদেশে এর আগে আর্জেন্টিনার সমর্থক ছিল বলে মনে করতে পারি না। কেউ জোর করে বলতে পারেন, বাংলাদেশে আগে থেকে আর্জেন্টিনার সমর্থক ছিল। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। '৭৮ সালেও বিশ্বকাপ জিতে সমর্থক তৈরি করতে পারেনি তারা। ফুটবল সমর্থক তৈরি করার ক্ষেত্রে দু'জনের নাম বলতে হয়- ব্রাজিলের পেলে, আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা। এখন তো সমর্থকরা দুই শিবিরে ভাগ।
তিনি ছিলেন সোজাকথা বলার মানুষ। যেটা বিশ্বাস করতেন, সেটাই বলতেন। রাজনৈতিক মতাদর্শ গোপন রাখেননি। কমার্শিয়াল ভেল্যু কমে যেতে পারে, সে চিন্তা করেননি। ফকল্যান্ড যুদ্ধের পর তিনি কোনোদিন ইংরেজি বলেছে বলে শুনিনি। ওই যুদ্ধের পর তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, প্রতিবাদস্বরূপ কোনোদিন ইংরেজি বলবেন না। তাতে অবিচল ছিলেন। বাম ঘরানার রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন ম্যারাডোনা। যে কারণে ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। কাস্ত্রো ম্যারাডোনাকে ভালোবাসতেন, স্নেহ করতেন। দু-তিনবার নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে ম্যারাডোনার চিকিৎসা করিয়েছেন কাস্ত্রো। কাকতালীয় হলেও একটি ঘটনা ঘটে গেছে, প্রিয় কাস্ত্রোর প্রয়াণ দিবস ২৫ নভেম্বর না ফেরার দেশে চলে গেলেন ফুটবলবিশ্বের কিংবদন্তি। তবে একটু বেশি আগে চলে গেলেন তিনি।
লেখক: জাতীয় দলের সাবেক কোচ
- বিষয় :
- বিদায় ম্যারাডোনা
- ম্যারাডোনার মৃত্যু