ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে মেঘনার ‘ডেঞ্জার জোন’ পাড়ি

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে মেঘনার ‘ডেঞ্জার জোন’ পাড়ি

ভোলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২২ | ০৯:৩৯ | আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২২ | ০৯:৩৯

ভোলার মনপুরা-তজুমদ্দিন রুটের সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় অবৈধ নৌযানে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। কালবৈশাখীর মৌসুমে ছোট ট্রলারে মেঘনার ডেঞ্জার জোন পাড়ি দিতে গিয়ে জীবনঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। ছয় মাস ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ঝড়-বাদলের কবলে পড়ে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে। বিকল্প উপায় না থাকায় জীবনঝুঁকি নিতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। সাগরকূলের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরার সঙ্গে জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলার যাতায়াতের জন্য মনপুরা ও তজুমদ্দিন রুটে বিআইডব্লিউটিসির শহীদ শেখ কামাল নামের একটি সি-ট্রাক ছিল।

যাত্রীরা জানান, অনেক পুরোনো এ নৌযানটি উত্তাল মেঘনায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় ২০২১ সালে অক্টোবর থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। এরপর ঘাট ইজারাদার ছোট একটি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার করছিলেন। ১৫ মার্চ থেকে মেঘনার ডেঞ্জার জোনে সি-সার্ভে বিহীন নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ওই লঞ্চটিও চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

যাত্রীদের অভিযোগ, লঞ্চ চলাচল বন্ধের পর থেকে অবৈধ ট্রলারে মনপুরার যাত্রীদের পারাপার করা হচ্ছে। বিকল্প উপায় না থাকায় তারাও ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। যে কোনো সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ার আশঙ্কার মধ্যে প্রতিদিন বহু যাত্রী ট্রলারে চলাচল করলেও স্থানীয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

গ্রীষ্ফ্মের শুরুতে প্রমত্তা মেঘনা উত্তাল হয়ে ওঠে। ঢেউ বেড়ে যায় বহুগুণ। প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ নারী, পুরুষ ও শিশু তজুমদ্দিন-মনপুরা রুটে স্টিলবডির ছোট একটি ট্রলারে করে যাতায়াত করছে। ওই ট্রলারে ব্যবসায়ীদের মালামালও পরিবহন করা হয়। প্রায় ১০ কিলোমিটার মেঘনার ঢেউ ভেঙে মনপুরা পৌঁছাতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। পুরো সময়টাই আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় কাটে যাত্রীদের। ট্রলারে ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে বেশি। অবৈধ ট্রলারটিতে যাত্রীদের জীবনরক্ষাকারী লাইফ জ্যাকেট অথবা বয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়নি।

বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক (ভোলা নদীবন্দর) সহিদুল ইসলাম জানান, ওই ট্রলারটি অবৈধ। মেঘনার ডেঞ্জার জোনে সি-সার্ভে বিহীন নৌযান চলাচল করতে পারবে না। এ ধরনের নৌযানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও থানাগুলোতে তাদের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে জানা যায়, জেলা পরিষদ থেকে নেওয়া ঘাট ইজারাদার শাজাহান মাঝি বর্তমানে অবৈধ ট্রলারে যাত্রী পারাপর করছেন। এ বিষয়ে ইজারাদারের প্রতিনিধি মো. মিলন জানান, সি-ট্রাক বন্ধ থাকায় তারা ট্রলারে যাত্রী পারাপার করছেন। ওই ট্রলারটি না থাকলে যাত্রীদের যাওয়া-আসা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেত। তবে যাত্রী পরিবহনের অনুমতি নেই বলেও তিনি স্বীকার করেন।

মনপুরা উপজেলা চেয়ারম্যান শেলিনা আক্তার চৌধুরী জানান, সি-ট্রাক বন্ধ থাকায় মনপুরার মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে মেঘনা পারাপার হচ্ছে। তাই এ দ্বীপের মানুষের ভোগান্তি কমাতে সি-ট্রাকটি দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছেন তিনি। মনপুরার ইউএনও শামিম মিঞা জানান, পুরোনো সি-ট্রাকটি বার বার বিকল হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তাই একটি নতুন সি-ট্রাক দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন। সি-ট্রাকের অভাবে তিনি ও তার দপ্তরের কর্মকর্তাদেরও ভোগান্তি হচ্ছে।

আরও পড়ুন

×