দাদন-ভাংতির বোঝা, তবু মন কান্দে

আশুগঞ্জে চাতালে কাজ করছেন নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা- ফাইল ছবি
আনোয়ার হেসেন, আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২২ | ২২:০০ | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২২ | ২২:০০
চাতাল শ্রমিক নুর ইসলামের পরিবারের 'দাদন' ছয় লাখ এবং বরকত আলীর দেড় লাখ। 'দাদন' নেওয়ায় নামমাত্র মজুরি পান, এ দিয়েই কোনো রকমে চলে সংসার। যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে ঈদের মতো 'বিলাসিতা' মানায় না। তবুও ছোট্ট ছেলেমেয়েদের জন্য মন কান্দে। সন্তানদের জন্য কিছু কিনতে মালিকের কাছে 'ভাংতি' চেয়েছেন তারা।
নুর ইসলাম ও বরকত আলী বলেন, ঈদে অনেক সময় টাকার অভাবে ছেলেমেয়েদের কিছু দিতে পারেন না। তখন বেশি খারাপ লাগে। তারা আশুগঞ্জের চাতালের শ্রমিক।
শ্রমিকরা জানান, তারা 'দাদন' (অগ্রিম শ্রম বিক্রি বাবদ সুদবিহিন টাকা) নিয়ে 'কাজ নেই, মজুরি নেই' মৌখিক চুক্তিতে নিয়োজিত হন। তাই উৎসব ঘিরে বাড়তি আর্থিক সুবিধা দাবি করতে পারেন না। প্রয়োজনে তারা মালিকের কাছে থেকে 'ভাংতি' (দাদনের পরও আপৎকালীন ঋণ) নিতে পারেন।
আশুগঞ্জের তিন শতাধিক চাতালকলে ধান শুকানো, চাল উৎপাদনে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাদের অর্ধেকের বেশি নারী। পরিবার-পরিজন নিয়ে চাতালের ভেতরে বিনা ভাড়ায় বসবাস করেন তারা। প্রত্যেক শ্রমিকই বছরের শুরুতে জনপ্রতি ৪০ হাজার থেকে লাখ টাকার বেশি দাদন নেন। আর তা পরিশোধ করা হয় নামমাত্র মজুরিতে।
শ্রমিকের মজুরি নির্ধারিত হয় ধানের মাঠ হিসাবে। একটি মাঠ উঠতে সময় লাগে তিন-চার দিন। তখন একজন শ্রমিক ৯০-১০০ টাকাসহ তিন কেজি চাল পান। কোনো কারণে চাল উৎপাদন ব্যাহত হলে মজুরি জোটে না।
ঝুনা বেগম বলেন, তার স্বামী নেই, দাদন প্রায় ৪০ হাজার টাকা। ঈদে বাচ্চাদের জন্য কাপড় কিনতে মালিকের কাছে এক হাজার টাকা ভাংতি চেয়েছেন।
চাতাল শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্বাস উদ্দিন সর্দার বলেন, 'দাদন' মালিক-শ্রমিক উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। শ্রমিক এ সুবিধা না নিলে অবশ্যই বাড়তি কিছু দাবি করা যেত।
উপজেলা চাতাল কল মালিক সমিতির সভাপতি মো. জোবায়ের হায়দার ভুলু বলেন, 'দাদন' দিতে প্রতি মিল মালিককে ১৫-২০ লাখ টাকা অতিরিক্ত গুনতে হয়। মালিক ব্যাংক সুদ দিলেও শ্রমিকদের কাছ থেকে কোনো লাভ নেওয়া হয় না।