তাপদাহে মরছে ঘেরের মাছ

এম এ এরশাদ, ডুমুরিয়া (খুলনা)
প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৯ জুন ২০২২ | ০১:৩৩
ডুমুরিয়ায় পানির সংকটে মারা যাচ্ছে ঘেরের চিংড়ি। টাকা খরচ করে ঘের প্রস্তুত এবং তদারকি করেও মাছ বাঁচাতে পারছেন না চাষিরা। চলতি আমন মৌসুমের শুরুতেও দেখা নেই বৃষ্টির। এসব কারণে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ৯ হাজার ৪৯৯ হেক্টর জমিতে মাছ চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে এক হাজার ১১৪ হেক্টর জমিতে গলদা, ৬ হাজার ৭৮১ হেক্টর জমিতে বাগদা, এক হাজার ৫৯৩ হেক্টর জমিতে কার্পজাতীয় মাছ ও আধানিবিড় ১১ হেক্টর জমিতে মাছ চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া বাণিজ্যিক খামার, ধান ক্ষেতে মাছ চাষ ও সমাজভিত্তিক ৩৭৫ হেক্টর জমিতে মাছ চাষ হচ্ছে। সব মিলে গত বছর এই উপজেলায় ১০ হাজার ৩৫৩ টন চিংড়ি উৎপাদন করা হয়। এই মাছ ৭২৪ কোটি টাকায় বিক্রি হয়। আর ১৬ হাজার ২২০ টন কার্পজাতীয় মাছ উৎপাদিত হয়। এই মাছ বিক্রি হয় ৩২৪ কোটি টাকা।
এই অঞ্চলে ৮৫ শতাংশ মানুষ চিংড়ি চাষে জড়িত। কিন্তু চলতি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট ও প্রচণ্ড তাপদাহে ১৩ শতাধিক ঘেরের বাগদা, গলদা ও কার্পজাতীয় মাছ মারা গেছে বলে দাবি চাষিদের।
শোভনা গাবতলা গ্রামের প্রভাত সরদার বলেন, তিনি চার বিঘা জমির ঘেরে ৩৫ হাজার গলদার পোনা ছাড়েন। পানি সংকটে সব চিংড়ি মারা গেছে। এতে তাঁর দেড় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
শিবপুর গ্রামের আরজান আলী শেখ জানান, তিনি সাড়ে চার বিঘা জমির ঘেরে ১০ হাজার গলদা চিংড়ি ছাড়েন। সব মারা যাওয়ায় তাঁর ক্ষতি হয়েছে দুই লাখ টাকা।
কাঁটাখালী গ্রামের মফিজুল ইসলাম মোল্লা, আ. মালেক, কাবির বিশ্বাস ও নিমাই সরকারের ভাষ্য, চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই ঘেরে পানির সংকট। প্রচণ্ড গরমে ঘেরের চিংড়ি মারা গেছে।
চিংড়িচাষি নূরুল ইসলাম বলেন, গত দুই বছর করোনাকালেও লাভের মুখ দেখেন তাঁরা। এবার মাছ মারা যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
বয়ারশিং গ্রামের মাছচাষি শংকর কুমার মণ্ডল ও ভান্ডরপাড়া গ্রামের চাষি সঞ্জয় কুমার বিশ্বাস জানান, চলতি মৌসুমে চাষিরা ভারত ও দেশীয় হ্যাচারির ভাইরাসমুক্ত রেণুর প্রতি ঝুঁকে পড়েন। প্রতি হাজার রেণু কেনেন ৯ থেকে ১ হাজার টাকায়। দেশী চিংড়ির খাবার ভারতীয় চিংড়ির জন্য উপযুক্ত নয়। এর জন্য রয়েছে আলাদা খাবার। চিংড়ির খাবারের মূল্য এবার খুব চড়া। এরপর চলতি আষাঢ় মাসে বৃষ্টির দেখা নেই। খাল-বিলে কোথাও পানি নেই। প্রচণ্ড তাপদাহে মাছ মারা যাচ্ছে। ধান-সবজি চাষও ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, তাপদাহের সময় মাছের খামারে কমপক্ষে ৩ ফুট পানি থাকা বাঞ্চনীয়। অন্যথায় পানি গরম হয়ে অক্সিজেন সংকটে মাছ মারা যেতে পারে।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, গত বছর আমন চাষ হয় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ৪৮ হাজার ১৮০ টন ধান। সবজি চাষ হয় ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। সবজির উৎপাদন ছিল ১ লাখ ১০ হাজার টন। উৎপাদিত সবজি ১৭৫ কোটি টাকায় বিক্রি হয়। এবার পানি সংকটে চলতি মৌসুমে সবজি চাষে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক।
উপজেলার খর্নিয়া গ্রামের কৃষক আফরোজা খানম বলেন, গত বছর আমনের ফলন ভালো হয়। এবার পানি সংকটে তাঁর দুই বিঘা জমিতে আমন চাষ করতে পারছেন না। একই এলাকার কৃষক আবুল কাশেম পানি সংকটের কারণে পাঁচ বিঘা জমিতে আমন ও সবজি চাষের আশা ছেড়ে দিয়েছেন।
শরাফপুর গ্রামের কালীপদ মণ্ডল জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে আমন চাষ করতে চান তিনি। কিন্তু পানির অভাবে আমন রোপণের জমিতে হালচাষে সমস্যা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, চলতি মৌসুমে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হবে। কিন্তু আষাঢ় মাসেও খাল-বিলের কোথাও পানি নেই। অনাবৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েছেন সবজি ও আমন চাষিরা।
- বিষয় :
- পানির সংকট
- ঘেরের চিংড়ি