ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

এক পায়ে লাফিয়ে স্কুলে যাওয়া সেই সুমাইয়ার দায়িত্ব নিলেন হুইপ ইকবালুর রহিম

এক পায়ে লাফিয়ে স্কুলে যাওয়া সেই সুমাইয়ার দায়িত্ব নিলেন হুইপ ইকবালুর রহিম

এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে প্রতিদিন দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করা সেই সুমাইয়া, ছবি: সমকাল

দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২২ | ০৬:৩৯ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২২ | ০৮:০০

এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে প্রতিদিন দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করা সুমাইয়ার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। সমকালে প্রকাশিত সংবাদ দেখার পর তিনি এ ব্যবস্থা নেন। পরে নিজেই ফোন করে সমকালের স্থানীয় প্রতিনিধিকে এ কথা জানান।

তিনি জানান, মাত্র ১০ বছর বয়সী একটি মেয়ে পড়ালেখার প্রতি কী পরিমাণ আগ্রহ থাকলে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে পারে, তা সুমাইয়াকে দেখে বোঝা যায়। তার কষ্টের বিষয়গুলো জানতে পেরে আমি ওকে একটি স্বনিয়ন্ত্রিত হুইলচেয়ার দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ঢাকা থেকে অত্যাধুনিক এই হুইল চেয়ারটি তাকে দেওয়া হবে, যাতে করে সে নিজেই পরিচালনা করে নিয়মিত স্কুলে যাওয়া-আসা করতে পারে। একইসঙ্গে তার পায়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করব।

তিনি বলেন, আমি গত ১৩ বছর ধরে সংসদ থেকে প্রাপ্ত ভাতার সম্পূর্ণ অর্থ ব্যয় করি গরিব-মেধাবীদের পড়ালেখায়। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছে সম্মানীর সেই অর্থে। আমরা পাঁচ ভাইবোন প্রতি বছরই পড়ালেখার জন্য ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করি। অভাবের কারণে বা অর্থের অভাবে যাতে করে কোনো শিক্ষার্থী ঝড়ে না পড়ে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। কে জানে হয়ত এদের মধ্যে এমন কেউ আছে, যারা আগামী দিনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আলোকডিহি ইউনিয়নের আলীপাড়ার রিকশাচালক শফিকুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়ার মাত্র দুই বছর বয়সে রাস্তায় পড়ে গিয়ে বাম পা বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। এই পা এখন ডান পায়ের থেকে ছোট হয়ে গেছে। কোনোভাবে আর দাঁড়িয়ে মাটিতে পড়ে না পা। তাই লাফিয়ে লাফিয়ে সুমাইয়াকে সব কাজ করতে হয়।

বর্তমানে সে পড়াশোনা করে উত্তর আলোকডিহি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে। প্রতিদিন পিঠে ব্যাগ আর হাতে বই নিয়ে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হয় সে। এ জন্য তাকে আসা-যাওয়া মিলে দুই কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে হয় প্রতিদিন। সুমাইয়া বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায়। কথা হলে সে বলে, আমার অনেক কষ্ট হয় প্রতিদিন এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যেতে। কিন্তু আমি পড়াশোনা করতে চাই। আমি বড় হয়ে চিকিৎসক হব, যাতে করে আমার মতো কেউ চিকিৎসার অভাবে এমন কষ্ট না পায়।

তার বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি আট বছর ধরে চিকিৎসা করিয়েছি। কোনো ফল পাইনি। অর্থপেডিক্সের চিকিৎসকরা বলেছেন, তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা লাগবে মেয়ের পা ভালো করতে। কিন্তু আমি তো রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই, কোথায় পাব এত টাকা। আমার মেয়ের এমন সংবাদ পেয়ে হুইপ ইকবালুর রহিম সাহেব হুইলচেয়ার দিতে চেয়েছেন। চিকিৎসার সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। আমি এজন্য তাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।

সুমাইয়ার মা সুমি আক্তার বলেন, মেয়ের খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলাচল ও স্কুলে যাওয়া আমি সহ্য করতে পারি না। চোখে পানি চলে আসে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাই। হুইপ সাহেব আমার মেয়ের চলাফেরা ও চিকিৎসার সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। আল্লাহ উনার ভালো করুন। আমি স্বপ্ন দেখি, আমার মেয়ে সুস্থ হয়ে পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হবে।

উত্তর আলোকডিহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামনুর রশিদ জানান, পড়ালেখায় সুমাইয়া খুবই ভালো। কোনো দিন স্কুল ফাঁকি দেয় না, কষ্ট করে স্কুলে আসে। আমরা চাই সে মানুষের মতো মানুষ হোক।

আরও পড়ুন

×