ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ফাঁসে তেতো জীবনের ইতি টানল মিষ্টি

ফাঁসে তেতো জীবনের ইতি টানল মিষ্টি

মাফিয়া আক্তার মিষ্টি

নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২২ | ০৯:৩১ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২২ | ১১:৩০

মা-বাবার ঘর আলো করে জন্ম। নাম রাখা হয় মাফিয়া আক্তার মিষ্টি। সব ভালোই চলছিল। পাঁচ বছর বয়সে ছেদ পড়ে মা-বাবার বিচ্ছেদে। এরপর থেকেই তেতো জীবন মিষ্টির। সম্পর্কের জেরে স্ত্রী আছেন জেনেও মা বিয়ে করেন জাহাঙ্গীর আলমকে। ১২ বছর বয়সে সৎবাবাকে আবিষ্কার করে নিজের ধর্ষক হিসেবে। মা ফেরেন বাবার জমিতে করা ছোট্ট ঘরে।

এখানেও প্রতিবেশী সম্পর্কে মামাতো ভাই নাইম হোসেনের কুনজর পড়ে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়িতে এসে ধর্ষণের চেষ্টা করে সে। এই বিষয়টি গ্রাম্য সালিশে গেলেও মীমাংসা হয়নি। এরপর থেকে নাইমের পরিবারের কটুবাণে বিষিয়ে ওঠে কিশোরী মন। গতকাল রোববার নাইমের চাচার গালমন্দ সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস নিয়ে তেতো জীবনের বিষাদময় ইতি টেনেছে মিষ্টি।

খবর পেয়ে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী সদরের পূর্ব দেওয়ানের খামার এলাকা থেকে মিষ্টির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানান, নাইম যে উত্ত্যক্ত করে আসছিল, মৌখিকভাবে পরিবার জানিয়েছিল। পরে জেনেছি, ঘটনাটি নিজেদের মধ্যে হওয়ায় দুই পরিবার বিয়ের দিকে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে রোববার নাইমের চাচা আব্দুর রেজ্জাক ওরফে জাম্বুর কটু কথা সহ্য করতে না পেরে মেয়েটি ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, প্রতিবেশী আছর উদ্দিনের ছেলে নাইম প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত মিষ্টিকে। বিষয়টি মাকে বললে তিনি নাইমের অভিভাবকদের জানান। এতে ক্ষুব্ধ নাইম গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়িতে একা পেয়ে মিষ্টিকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামে সালিশ হয়। সেখানে মীমাংসা না হওয়ায় কিশোরীর মা থানায় অভিযোগ করেন। এরই জেরে রোববার সকালে নাইমের চাচা আব্দুর রেজ্জাক মিষ্টিকে দেখে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। এক পর্যায়ে মিষ্টি দৌড়ে ঘরে গিয়ে ফাঁস নেয়।

থানায় লাশের সামনে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মিষ্টির মা মর্জিনা বেগম। তাঁর আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। জ্ঞান ফিরলেই মর্জিনা বলছেন, 'জীবন কেন এমন হলো? কাকে নিয়ে বাঁচব? ওদের যন্ত্রণা সইতে না পেরে মেয়েটা মরে গেল। গ্রামের কেউ বিচার করল না! আমরা গরিব বলে বিচার পাইলাম না।'

মিষ্টির মামা আদম আলী বলেন, আমার বোনের জীবনটা দুঃখের। প্রথম স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর যাকে ভালোবেসে বিয়ে করল, সে-ই মেয়েকে ধর্ষণ করল। এ ঘটনায় আমার বোনের মামলায় গত ১৩ মাস ধরে দুলাভাই জেলে। নাইমকে নিষেধ করলেও শোনেনি। তাদের কারণেই আমার ভাগ্নি আত্মহত্যা করেছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহরাব হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবারের ঘটনায় আমরা সালিশ বৈঠক ডাকি। কিন্তু তারা রায় মানবে না বললে চেয়ারম্যান কিংবা থানায় যেতে পরামর্শ দিই। পরে মেয়েটির পরিবার থানায় অভিযোগ করেছে বলে জেনেছি।

আরও পড়ুন

×