ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

চিকিৎসা সহায়তা পেয়ে তাঁদের আনন্দাশ্রু

চিকিৎসা সহায়তা পেয়ে তাঁদের আনন্দাশ্রু

কিশোরগঞ্জ অফিস

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২২ | ২৩:২৫

কয়েক বছর ধরে পেটের ব্যথায় ভুগছিলেন মোহাম্মদ শিহাবউদ্দীন। ২০১৯ সালের শেষ দিকে তিনি চিকিৎসা নিতে আসেন কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যার হাসপাতালে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পাথর ধরা পড়ে তাঁর পিত্তথলিতে। চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেটি অপসারণের পরামর্শ দেন। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে তাঁরা আরও জানান, অস্ত্রোপচারটি ঝুঁকিপূর্ণ। জেলার হোসেনপুর উপজেলার দক্ষিণ গোবিন্দপুরের শিহাব পেশায় বর্গাচাষি। আর্থিক সংগতি না থাকায় রোগের চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে ওঠে তাঁর। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে প্রথম দফায় পাওয়া এক লাখ টাকায় ঢাকায় অস্ত্রোপচার করান শিহাব। গতকাল মঙ্গলবার তিনি এসেছিলেন দ্বিতীয় দফায় আরও এক লাখ টাকার চেক নিতে।

হোসেনপুর উপজেলা সদরের আসাদুজ্জামান অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁর মতো সাত শতাধিক মানুষকে দেওয়া হয় চিকিৎসার জন্য অর্থ সহায়তা। কিশোরগঞ্জ সদর, হোসেনপুর ও পাকুন্দিয়া উপজেলার বাসিন্দা সবাই।

তিন লাখ টাকা অনুদান পেয়ে চিকিৎসায় সেরে ওঠেন কিশোরগঞ্জ সদরের শোলাকিয়ার বাসিন্দা মো. রুবেল মিয়া। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, 'যে রোগে আক্রান্ত ছিলাম, তার চিকিৎসার ব্যয় চালানো সম্ভব ছিল না। অনুদানের টাকায় চিকিৎসা করে নতুন জীবন পেয়েছি।' এই অনুদানের ব্যবস্থা করায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কৃষিবিদ মসিউর রহমান হুমায়ূনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রুবেল।

জাতীয় শোক দিবস ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁদের হাতে অনুদানের চেক তুলে দেন অতিথিরা। সেখানে নিজেদের অনুভূতি জানান সহায়তাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কৃষিবিদ মসিউর রহমান হুমায়ূন। তিনি বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন মানবিক নারী। তিনি বিরোধী দলে থাকতে যেভাবে মানুষকে সহায়তা করেছেন, বর্তমানেও একই নিয়মে বিপন্ন মানুষকে সহায়তা করছেন।' গত কয়েক বছরে শুধু কিশোরগঞ্জ জেলায়ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ কোটি টাকারও বেশি চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সগড়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা গোলাপ খান দীর্ঘ রোগভোগের একপর্যায়ে হারিয়ে ফেলেন দৃষ্টিশক্তি। পরে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তাঁর চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছে পরিবার। বিষয়টি জেনে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের পাঁচ লাখ টাকা দেন। প্রয়াত বড় ভাইয়ের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার চেক নিতে আসেন নবী হোসেন। টাকার চেক পেয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি। এ সময় বলেন, 'বড় ভাইয়ের চিকিৎসায় সব সহায়-সম্পদ শেষ হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর এ সহায়তা আমার ভাইয়ের পরিবারকে আবার মাথা তুলে দাঁড়াবার সুযোগ করে দিল।'

জেলা শহরের বত্রিশ এলাকার জেলা সরণির বাসিন্দা লতা বণিক জানান, হার্টের ভাল্ক্বের চিকিৎসার জন্য দুই লাখ টাকা পেয়েছেন। ঢাকায় চিকিৎসা করিয়ে এখন ভালো আছেন। হার্টের বাইপাস করানোর জন্য একই এলাকার জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছেন পাঁচ লাখ টাকা। এ ছাড়া হোসেনপুরের কাপাসাটিয়া গ্রামের শেখ শরীফ মিয়া, আড়াইবাড়িয়ার মো. কামাল উদ্দিন, সেলিম আহম্মেদ, মরিয়ম আক্তার, মো. আল আমিন, মো. আলমগীর হোসেন, পাকুন্দিয়া উপজেলার রশিদ মিয়া অনুদানের চেক পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাবেয়া পারভেজ, পৌরসভার মেয়র আবদুল কাইয়ুম খোকন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ আলম, ছড়াকার ও গবেষক জাহাঙ্গীর আলম জাহান, আলহাজ মকবুল হোসেন, মো. খুরশীদ উদ্দিন, আক্তার হোসেন দুলাল, এম এ হালিম গোলাপ, অধ্যক্ষ মুসলেহ উদ্দিন খান, ইয়াসির আরাফাত, মুখলেছুর রহমান, আজহারুল ইসলাম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।

আরও পড়ুন

×