ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

প্রাণ ফিরে পেয়েছে মৌলভীবাজারের ৯২ চা বাগান

প্রাণ ফিরে পেয়েছে মৌলভীবাজারের ৯২ চা বাগান

দলে দলে কাজে যোগ দিচ্ছেন চা-শ্রমিকরা। ছবি: ইউসুফ আলী

মৌলভীবাজার ও কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২২ | ০৫:০৩ | আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২২ | ০৫:০৩

টানা ১৯ দিন আন্দোলনের পর মজুরি নিয়ে সমস্যার অবসান হওয়ায় মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানে পুরোদমে কাজ শুরু করেছেন চা-শ্রমিকরা।

সোমবার সকাল থেকেই জেলার কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, বড়লেখা. কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার বাগানগুলোতে কাজে যোগ দিয়ে পাতা উত্তোলন শুরু করেন চা-শ্রমিকরা। এতে আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে জেলার চা বাগানগুলো।

দেওঠড়া চা বাগানের শ্রমিক ময়না রবিদাস ও নারীনেত্রী লক্ষীনারায়ণ সিং বলেন, ১৬ দিন পরে বাগানে ফিরে খুব ভালো লাগছে। তবে পাতার অবস্থা দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে। যে পাতা গুলো আড়াই কুড়ি হলে তোলা হয়, সেই পাতায় এখন ২০ থেকে ২২ কুড়ি হয়েছে। যে পাতাগুলোর বয়স বেশি হয়েছে সেগুলো ফেলে দিতে হবে। চা পাতায় আমাদের ভালোবাসা আর আবেগ। বাংলাদেশে চা শিল্প টিকিয়ে রাখাটা আমাদেরই দায়িত্ব। যেহেতু এখন চায়ের ভরা মৌসুম তাই কষ্ট হলেও দ্রুত পাতা উত্তোলনের চেষ্টা করবো। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, তিনি এমন উদ্যোগ না নিলে এখনও আন্দোলন শেষ হতো না।

কানিহাটি চা বাগানের শ্রমিক নেতা ও মাসিক চা মজদুর সম্পাদক সীতারাম বীন বলেন, জেলার অধিকাংশ চা বাগানে অর্ধাহারে অনাহারে কাজে যোগ দিয়েছে চা শ্রমিকরা।

এসময় বাগান ব্যবস্থাপক বরাবর আবেদন করে প্রতিটি চা-শ্রমিককে কর্জ হিসেবে ১ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য এবং সাপ্তাহিক তলব থেকে ১০০ টাকা করে কর্তন করে ঋণ পরিশোধ করে নিতে অথবা বকেয়া টাকা থেকে ১ হাজার টাকা কর্জ নিতে প্রতিটি বাগানের বাগান পঞ্চায়েত কমিটিকে অনুরোধ করেন তিনি

পাত্রখোলা চা বাগানের শ্রমিক নেতা দুলাল ছত্রী বলেন, টানা ১৬ দিন পর বাগানে ফিরে নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছি। এর আগে একটানা এতদিন বাগানের বাইরে ছিলাম না। এতদিন কাজ করতে না পেরে খুব কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারিনি। এখন যাতে সবকিছু আগের মতো ফিরেয়ে আনা যায় সেই চেষ্টা করছি।

শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগানের শ্রমিক জমিলা খাতুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কারণে আমরা আবার কাজে ফিরতে পেরেছি। আমাদের মা আবার আমাদের কাজে ফেরার ব্যবস্থা করেছেন। ১৭০ টাকায় আমরা এখন মোটামুটি ভালো করে চলতে পারবো।

ফুলবাড়ি চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি মনোরঞ্জন পাল বলেন, এতদিন পর ফ্যাক্টরিতে ফিরে দেখি সব কিছু এলোমেলো। মেশিনে ধুলোময়লা পড়েছে। চা পাতাগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো দেখে খুব খারাপ লেগেছে। সকালে এসেই আগে সবকিছু পরিষ্কার করেছি। এখন কাজ শুরু করবো। একটানা কাজ করবো।

চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত রোববার থেকে সাধারণ চা-শ্রমিকরা কিছু কিছু বাগানে কাজে যোগ দিয়েছে। সোমবার থেকে মনু-দলই ভ্যালির ২৩টি চা বাগানে পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নিয়েছে।

প্রসঙ্গত, দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে ৯ আগস্ট একযোগে আন্দোলনে নামেন দেশের ১৬৭টি বাগানের শ্রমিকরা। প্রথমে দিনে দু'ঘণ্টা করে টানা চারদিন কর্মবিরতি পালন করেন তারা। ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পুরোদমে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন চা শ্রমিকরা। পরে ১৯ আগস্ট রাতে মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার বিষয়ে একটি চুক্তি হলেও সেটি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যান শ্রমিকরা।

কয়েক দফা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হলেও চা-শ্রমিকদের মজুরি সমস্যার সমাধান হয়নি। এসময় মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে থাকা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করতে থাকেন। অবশেষে তাদের মজুরি বাড়িয়ে ১৭০ টাকা করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে কাজে ফেরার ঘোষণা দেন চা-শ্রমিকরা।

আরও পড়ুন

×