আশ্রয়ণ প্রকল্পে জোয়ারের পানি ঘর ছাড়ছেন বাসিন্দারা

খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের চরে নির্মিত শেওড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রতিদিন তলিয়ে যাচ্ছে জোয়ারের পানিতে। বুধবারের ছবি সমকাল
শেখ হারুন অর রশিদ, কয়রা (খুলনা)
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ২৩:১৪
খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের চরে নির্মিত শেওড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। নিম্নচাপের প্রভাবে এখন জোয়ারের পানিতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এ অবস্থায় সেখানকার বাসিন্দারা অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সেখানকার ৬০টি উপকারভোগী পরিবারের মধ্যে ১৬টি পরিবার ছাড়া বাকিরা প্রকল্প এলাকা ছেড়ে গেছেন।
উপকারভোগীদের অভিযোগ, সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাসের পর থেকেই এমন সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। জোয়ারের পানি ঠেকাতে নিজেদের উদ্যোগে বাঁধ দিয়েও তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানালেও কেউ তা আমলে নেয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে কপোতাক্ষের চরে নির্মাণ করা হয়েছে এ আশ্রয়ণ প্রকল্প। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে থাকাসহ নানা সংকটে বেশিরভাগ পরিবারই অন্যত্র চলে গেছে। চারটি অগভীর নলকূপের সবই নষ্ট। বৈদ্যুতিক লাইন টানা হলেও সংযোগ দেওয়া হয়নি। পুকুরগুলো জোয়ারে পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। যাতায়াতের কোনো রাস্তা না থাকায় দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এখনকার বাসিন্দাদের।
রঞ্জিতা দাস এ প্রকল্পে একটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছিলেন। এক মাস থাকার পর দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ছেলেমেয়ে নিয়ে পাশের গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন ঘরের মেঝে পর্যন্ত জোয়ারের পানি ওঠে। গাঙের নোনাপানিতে ঘরের মাটির মেঝে ধসে যাচ্ছে। বাতাসে টিনের চাল নড়বড় করে।
মোকছেদ আলী গাজী নামের এক উপকারভোগী অভিযোগ করে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পটি অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরগুলো নির্মাণের আগে জায়গাটি যদি উঁচু করে বালু ভরাট করা হতো, তাহলে জোয়ারের পানিতে এভাবে তলিয়ে যেত না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় পৃথকভাবে ৬০টি ঘর নির্মাণের জন্য ৯০ লাখ, চারটি গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য ৩ লাখ ২০ হাজার ও কমিউনিটি ভবন তৈরির জন্য ৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। এ ছাড়া প্রকল্পের জায়গা ভরাটের জন্য আলাদা ২৫১ দশমিক ৪০১ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, শুরুতেই আমরা প্রকল্পের স্থানটি নদীর স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন ফুট উঁচু করে ভরাটের দাবি জানিয়েছিলাম। সে সময়ে প্রকল্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, মাটি ভরাটের জন্য আলাদা বরাদ্দ না থাকায় বেশি উঁচু করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করেন, উপকারভোগীদের খাবার পানির চাহিদা মেটাতে চারটি গভীর নলকূপ স্থাপনের কথা থাকলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা চারটি অগভীর নলকূপ স্থাপন করেছেন, যা প্রথম থেকেই অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
জানতে চাইলে তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (বর্তমানে মোংলা উপজেলায় কর্মরত) মো. জাফর রানা মোবাইল ফোনে বলেন, 'বিষয়টি আপনারা একটু পজিটিভলি দেখেন। দুই বছর আগের ব্যাপার নতুন করে টানাটানি না করাই ভালো।' স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ গাজী বলেন, 'উপকারভোগীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে।' উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার পর আর কোনো অতিরিক্ত বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ চেয়ে একাধিকবার আবেদন করেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ায় স্থানীয়ভাবে টিআর ও কাবিখা থেকে বরাদ্দ নিয়ে সংস্কারকাজ করতে হয়েছে, যা দিয়ে মূল সমস্যা সমাধান সম্ভব হয়নি।
- বিষয় :
- আশ্রয়ণ প্রকল্প
- জোয়ারের পানি