ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

উদ্যোগ

এক দল তরুণের 'তৃপ্তির আহার'

এক দল তরুণের 'তৃপ্তির আহার'

তৃপ্তির আহারের খাবার পেয়ে খুশি ছিন্নমূল এক নারী। ছবিটি খুলনা নগরীর পুরাতন রেলস্টেশন এলাকা থেকে নেওয়া-সমকাল

হাসান হিমালয়, খুলনা

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৪:৫২

করোনা মহামারির কশাঘাতে গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত। বেঁচে থাকার সংগ্রামে সবাই ক্লান্ত। দ্রব্যমূল্যে জর্জরিত জীবনে কে কার খবর রাখে? এর মাঝেও খুলনা শহরে অনাহারীদের মুখে একবেলা খাবার তুলে দিতে নিরন্তর ছুটে চলেছেন এক দল তরুণ। 'খুলনা ফুড ব্যাংকিং কল্যাণ সংস্থা'র এসব সদস্য টানা ১০ মাস অসহায়, দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে খাবার দিয়ে আসছেন।

সংস্থার সদস্যরা জানান, গত বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে তাঁরা প্রতিদিন ৮০ থেকে ২০০ জনের জন্য রান্না করছেন। পুরো সপ্তাহ নগরীর সাতটি এলাকায় এসব খাবার বিতরণ করা হয়। অদম্য তারুণ্য বিনামূল্যে খাবার বিতরণ কর্মসূচির নাম দিয়েছে 'তৃপ্তির আহার'। তাঁদের শুরুর গল্পটা একটু ভিন্ন। বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বেঁচে যাওয়া খাবার সংগ্রহ করে ২০১৭ সালে শুরু হয় ফুড ব্যাংকিং কল্যাণ সংস্থার কার্যক্রম। পরিচিতি এতটাই, এখন কোনো অনুষ্ঠানে খাবার বেঁচে গেলেই তাঁদের ডাক পড়ে। এই পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে করোনাকালে অক্সিজেন সিলিন্ডার, খাদ্যসামগ্রী নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান ফুড ব্যাংকিং কল্যাণ সংস্থার সদস্যরা। পরে তাঁরা ছিন্নমূল শিশুদের জন্য স্কুল ছাড়াও সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ত্রাণ নিয়ে দুর্গতদের মধ্যে বিতরণ করেন।

সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবির মেঘ সমকালকে বলেন, কার্যক্রম শুরুর পর দেখলাম, কোনো কোনো দিন অনুষ্ঠান কিংবা রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। আবার পাওয়া গেলেও খুবই কম। ছিন্নমূলের এসব মানুষ যাতে অভুক্ত না থাকেন, এ জন্য আমরা এসব খাবারের সঙ্গে নিজেরা রান্না করে বিতরণের পরিকল্পনা করি।

তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনের বেশিরভাগ সদস্য শিক্ষার্থী। তাঁরা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেন। তৃপ্তির আহারে দু'জন স্থায়ী দাতা আছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের কার্যক্রম দেখে অনেকে নগদ অর্থ ছাড়াও নির্ধারিত দিনে বাজার করে দিয়ে যান। খাবারে ডিম, খিচুড়ি, সাদা ভাত, বিরানি, মুরগি, মাছসহ নানা পদ থাকে। সরেজমিন সংস্থার অস্থায়ী কার্যালয় নগরীর ফারাজীপাড়া পারিজাত ভবনে (সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলীর বাসভবন) গিয়ে দেখা যায়, সাদা ভাত ও সরিষা ইলিশ প্যাকেট করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। ৯০টি প্যাকেট নিয়ে দুটি দল বের হয়ে যায়। এক দল নগরীর পুরোনো রেলস্টেশনে এবং অন্যরা খালিশপুর সরকারি পলিটেকনিকের সামনের বস্তিতে নিয়ে এগুলো বিতরণ করে।

স্বেচ্ছাসেবক মেহেরাব রিশাদ বলেন, এখন ইলিশের মৌসুম। দামের কারণে খেটে খাওয়া মানুষের ইলিশ কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। এ জন্য এখন সপ্তাহে এক দিন ইলিশ-ভাত দেওয়া হচ্ছে।

খাবার দেখে খালিশপুরে বস্তির শিশুরা দৌড়ে আসে। শিশু সুরাইয়ার মা রেহেনা আকতার বলেন, প্রায়ই ছেলেগুলো এসে খাবার দিয়ে যায়। এত ভালো খাবার সন্তানকে কিনে খাওয়ানোর সামর্থ্য আমাদের নেই। ওদের খাবার সবাই তৃপ্তিসহকারে পেট পুরে খায়।

ছেলে সোহেল রানাকে নিয়ে এ বছর প্রথম ইলিশ খেলেন শিউলী বেগম। তিনি জানান, তিন বেলা খাবারই জোটে না। ছেলের মুখে ইলিশ কীভাবে দেব? তৃপ্তির আহারের ইলিশের পিস অনেক বড়। মা-ছেলে খেয়ে প্রাণভরে দোয়া করেছি।

তৃপ্তির আহারের খাবার শনিবার থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন রেলস্টেশন, পুরোনো রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাট, বটিয়াঘাটার কৃষ্ণনগর খেলার মাঠ, গল্লামারী বস্তি এলাকা, রূপসা ঘাট ও বাজার, শিশুদের স্কুলে এবং শুক্রবার আলোচনা করে বিতরণ করা হয়।

সংগঠনের সভাপতি আরও বলেন, খাবার পেয়ে এসব মানুষ যে তৃপ্তির হাসি দেয়, তাতেই আমরা সব কষ্ট ভুলে যায়। আগামী বছর থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫০০ জনের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করব। ময়লাপোতা মসজিদের মতো নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কিছু বিনামূল্যে খাবার বিতরণের বুথ খুলব। খাবার কোনো সাহায্য নয়, এটি একজন মানুষের প্রতি অন্যজনের ভালোবাসা। আমরা শুধু এই ভালোবাসা ছড়িয়ে দিচ্ছি।

আরও পড়ুন

×