হুন্ডি ব্যবসায়ী চক্রের ১১ সদস্য গ্রেপ্তার চট্টগ্রামে

আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৩:৫৭
চট্টগ্রামে একটি হুন্ডি ব্যবসায়ী চক্রের ১১ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর তাঁদের কাছ থেকে মানি লন্ডারিংয়ের ভয়ংকর তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাঁরা দেখতে পান, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের একটি নম্বর থেকে অস্বাভাবিকভাবে পাঁচ মাসে প্রায় আট হাজার লেনদেন হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন নম্বরে পাঠানো হয়েছে (ক্যাশ ইন) ছয় কোটির বেশি টাকা। এ অর্থের বেশিরভাগই সৌদিপ্রবাসীদের স্বজনদের ব্যক্তিগত মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে জমা করা হয়।
সৌদি আরবে অর্থ সংগ্রহ করে ছয়জনের একটি চক্র। চট্টগ্রামে সেই অর্থ আরেক চক্রের ১৭ জন পৌঁছে দেন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) নির্দিষ্ট নম্বরে। তিনটি বিশেষ অ্যাপস ব্যবহার করে সৌদি আরব ও চট্টগ্রামের এই সিন্ডিকেট মানি লন্ডারিং করেছে কোটি কোটি টাকা। মানি লন্ডারিং মামলায় ১১ জন গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাবন্দি। তাঁদের মধ্যে অবৈধ চক্র পরিচালনার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আটজন।
জবানবন্দির বরাতে পুলিশ জানায়, এ অর্থ লেনদেন করে মোটা কমিশন নিতেন এমএফএস ডিস্ট্রিবিউটর ফিরোজ। মামলার বাদী সিআইডির এসআই রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, জয় কম্পিউটারের মালিক রুপন কান্তি দাশ জয় ১ এপ্রিল থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ৭ হাজার ৮২৫টি ট্রানজেকশনের মাধ্যমে ৬ কোটি ৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা ক্যাশ ইন করেন। ০১৭৮০...২৭০ নম্বর থেকে এ লেনদেন হয়। গত ১ এপ্রিল থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নগরের জুবিলী রোডের সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ লেনদেন করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, মায়েজনেট ও ইজিক্যাশ নামে অ্যাপস ব্যবহার করেই সৌদি আরব প্রবাসীদের কাছ থেকে বেশি অর্থ পাঠাতেন তাঁরা। চট্টগ্রামের আক্তার হোসেন ব্যবহার করতেন মায়েজনেট আর দিদারুল আলম ব্যবহার করতেন ইজিক্যাশ। এমএফএস প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন রুপন দাশ। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতেই অ্যাপস ব্যবহার করতেন তাঁরা। গত ৫ সেপ্টেম্বর সিআইডি রুপন দাসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায়।
সিআইডি জানায়, চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার বড়হাতিয়ার আক্তার হোসেনের পক্ষে সৌদি আরবে অর্থ ও এমএফএস নম্বর সংগ্রহ করেন ফজল করিম, শাহ আলম ও আফসার। অ্যাপসের মাধ্যমে তা পাঠাতেন চট্টগ্রামে। মেসার্স আক্তার অ্যান্ড ব্রাদার্স দেশে প্রবাসীদের স্বজনদের এমএফএস নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দিত। আক্তারের পক্ষে কাজ করতেন এসএম এন্টারপ্রাইজের ওয়াহিদুল ইলম ও আবুল বশর। সাতকানিয়ার এওচিয়ার দিদারুল আলমের হয়ে সৌদি আরবে অর্থ ও এমএফএস নম্বর সংগ্রহ করেন আওয়াল, হোসাইন ও মামুন।
দিদারুলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুমন অ্যাসোসিয়েটের আড়ালে পরিচালিত বিশেষ অ্যাপসে সৌদি থেকে তথ্য-উপাত্ত পাঠিয়ে দিতেন আওয়ালরা। দিদারুলের হয়ে কাজ করতেন সাইফুল, জাকের হোছাইন, বক্কর, সাইফুল আলম ও খুরশেদুল আলম ইমন।
সিআইডির অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়ার পর চট্টগ্রাম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আক্তার হোসেন, ফরহাদ হোসাইন ইমন, আসিফ নেওয়াজ, আদিবুর রহমান, জুনাইদুল হক, হোসাইনুল কবির, মবিন উল্ল্যাহ ও রুপন দাশ। তবে আসামি জুনাইদুলের আইনজীবী তৌহিদুর রহমান বলেন, তাঁর মক্কেল মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত ছিলেন না। তাঁকে এ ঘটনায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি নির্দোষ।
সিআইডি সূত্র জানায়, নগরের জুবলী রোডের কাদের টাওয়ারের অষ্টম তলায় সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের অফিস। এখানে বসেই এমএফএস ডিস্ট্রিবিউটর সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের সিইও রাশেদ মঞ্জুর ফিরোজ মানি লন্ডারিং করা অর্থ লেনদেন করে মোটা কমিশন নিতেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইমন, আসিফ, আদিবুর, হক, কবির ও মবিনের মাধ্যমে এমএফএস এজেন্ট নম্বর সংগ্রহ করে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করতেন। দিদারুল আলম ও আক্তার হোসেনের কাছ থেকে কমিশন হিসেবে বিপুল অর্থ নিয়ে রাশেদ এ কাজ করতেন বলে সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে।