ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

খুলনা নদীবন্দর যেন সারের গুদাম

খুলনা নদীবন্দর যেন সারের গুদাম

খুলনা নদীবন্দরে স্তূপ করে রাখা সারের কারণে জাহাজ নোঙরের জায়গা নেই- সমকাল

হাসান হিমালয়, খুলনা

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১৫:০১ | আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১৫:২৮

মোংলা বন্দর থেকে নদীপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহূত হয় খুলনা নদীবন্দর। বন্দরের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ঘাটে প্রতি মাসে অর্ধশতাধিক জাহাজ খালি করা হয়। কিন্তু গত ছয় মাস ধরে ঘাটে পণ্য খালাস ব্যাহত হচ্ছে। জাহাজ নোঙরের স্থানে সারের বস্তা স্তূপ করে রাখায় বন্দরে জাহাজও নোঙর করা যাচ্ছে না। দিনের পর দিন নদীতে পড়ে থাকছে পণ্যবাহী কার্গো ও জাহাজ। এতে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।

এদিকে নদীবন্দর ঘাটে সার স্তূপ করে রাখায় ঘাটও দেবে যাচ্ছে। গত বছর স্কিড ঘাটের একটি অংশ নদীতে ধসে যায়। এ ঘটনার পর খুলনা নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ সার সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিছুদিন ডাম্পিং বন্ধ থাকলেও ফের ফিরেছে পুরোনো চেহারায়।

সরেজমিন নদীবন্দর এলাকা ঘুরে দেখা  গেছে, নদীর পাশে পুরো এলাকাজুড়ে  সার স্তূপ করে রাখা। ভৈরব নদীতীরের নিরাপত্তা দেয়ালের গা-ঘেঁষে রাখা হয়েছে সার। যতদূর দেখা যায় শুধু সারের স্তূপ। সারের কারণে জাহাজ নোঙরের স্থান সংকুচিত হয়ে গেছে। ঘাটে ট্রাকসহ অন্য কোনো যানবাহন ভিড়তে পারছে না।

নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ইউরিয়া সার এনে ঘাটে স্তূপ করে রাখা হয়। গত সাত মাস ধরে ঘাটেই পড়ে রয়েছে এসব সার। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) পক্ষে এসব সার এনে খুলনা নদীবন্দর ঘাটে ডাম্পিং করেছে বাল্ড ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সূত্র জানায়, বিদেশ থেকে আমদানি করা সার পরিবহনের পর বিসিআইসির গুদামে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ঠিকাদারের। গুদাম ফাঁকা না থাকলে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সার সংরক্ষণের কথা ঠিকাদারের। এ জন্য ঠিকাদারকে ভাড়াও দিয়ে থাকে বিসিআইসি। কিন্তু জাহাজ থেকে সার খালাসের পর ঘাটেই ফেলে রাখেন ঠিকাদার। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন অন্য ব্যবসায়ীরা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উপপরিচালক ও খুলনা নদীবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, ঘাটে মাত্রাতিরিক্ত সার স্তূপ করে রাখায় ঘাট এলাকা দেবে যাচ্ছে। নদীর সীমানা দেয়ালের পাশে সার রাখায় সিট পাইলিংও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে যে কোনো সময় বড় ধরনের ধস দেখা দিতে পারে। বিষয়টি সংশ্নিষ্টদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। দ্রুত সার সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব ওয়াহিদুজ্জামান খান পল্টু সমকালকে বলেন, ঘাটে সার রাখায় জাহাজের পণ্য খালাসের জায়গা নেই। খুলনার ঘাটে আগে একটি কার্গো বা ছোট জাহাজ খালাস করতে চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগত। এখন ১৫-২০ দিন সময় লেগে যাচ্ছে। এতে বিপুল অঙ্কের টাকা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা।

এ ব্যাপারে বিসিআইসির উপপ্রধান প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদরকে দ্রুত সার সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

×