ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ফাঁড়ি হাজতে ব্যবসায়ীর মৃত্যু, বিক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

ফাঁড়ি হাজতে ব্যবসায়ীর মৃত্যু, বিক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

ছবি: সমকাল

পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ | ১০:০৭

পীরগঞ্জ উপজেলার ভেন্ডাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির হাজতে সামছুল ইসলাম (৫৫) নামের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের দাবি, তিনি মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। লজ্জায় পরনের কাপড় গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পরিবারের দাবি, পুলিশ উৎকোচ না পেয়ে তাকে নির্যাতন চালিয়ে ফাঁড়ি হাজতে হত্যা করেছে। সামছুল পার্শ্ববর্তী মিঠাপুকুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে।

এ ঘটনা বুধবার সকালে এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে হাজারো নারী-পুরুষ পুলিশের শাস্তির দাবিতে ফাঁড়ি ঘেরাও করে। প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে ভেন্ডাবাড়ি-বড়দরগাহ সড়কটি উত্তেজিত জনতা অবরোধ করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সময় রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসাইন দোষী পুলিশদের বিচারের আশ্বাস দিলেও অনড় থাকে জনতা। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা ফাঁড়িতে ঢিল ছুড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। জনতাও ঢিল ছোড়ে। পাল্টাপাল্টি আক্রমণে সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) হাফিজুর রহমানসহ ১২ পুলিশ ও ভিক্ষুক আব্দুল কাদের, বড়দরগাহ্ ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক, কাঠমিস্ত্রি আইয়ুব আলীসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। 

এক পর্যায়ে জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় ৩০-৩৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। অনেকেই স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।

নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাতে ভেন্ডাবাড়ি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম তার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে পীরগঞ্জের বড়দরগাহ্ নামক স্থান থেকে মাদক ব্যবসার অভিযোগে সামছুল ইসলামকে আটক করে নিয়ে আসে। পরদিন সকালে সামছুল ইসলামের লোকজন তদন্তকেন্দ্রে এলে পুলিশ জানায়, সামছুল গভীর রাতে নিজের পরনের শার্ট গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এদিকে নিহতের স্ত্রী মমেনা বেগম, কন্যা সান্ত্বনা ও বোন ফাতেমা বেগম কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের জানান, তিনি মাদকাসক্ত নন এবং মাদক ব্যবসার প্রশ্নই আসে না। তিনি একজন ছাগল ব্যবসায়ী। রাত ১১টায় শেষ সাক্ষাতের সময় এক লাখ টাকা দাবি করেন ফাঁড়ি ইনচার্জ। টাকা না পেয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে।

দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান তালুকদার সমকালকে বলেন, পুলিশ হেফাজতে মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মাদক-সংশ্লিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তিনি ব্যবসায়ী হিসেবেই পরিচিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনরত অনেকেই বলেন, পুলিশ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম পীরগঞ্জের ওসি সরেস চন্দ্রের মদদে দীর্ঘদিন ধরে ভেন্ডাবাড়ি ফাঁড়িতে আটক বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন। শুধু অভিযোগের নামে বিভিন্ন মানুষকে আটক করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। এ বিষয়ে ভেন্ডাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে হাজতে লজ্জায় আসামির আত্মহত্যার কথা জানান। 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসাইন সমকালকে জানান, বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে আক্রমণ করলে পুলিশ আনুমানিক ৩৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সঠিক তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিএমএ মমিন, জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক শাহিদুল ইসলাম পিন্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামিম দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এদিকে বিকেলে রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার ঘটনাস্থলে এসে প্রেস ব্রিফিং করেন। তিনি জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসাইনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দাখিল করবে। ইতিমধ্যে ফাঁড়ি ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম, এসআই তাজউদ্দিন, পিএসআই মাহি আলম, এএসআই হরিকান্ত, কনস্টেবল আরিফুল ও ভুপেনকে ক্লোজ করা হয়েছে এবং গঙ্গাচড়া থানার ইনস্পেক্টর তদন্ত সুশান্ত সরকারকে সাময়িকভাবে ভেন্ডাবাড়ি ফাঁড়ি ইনচার্জের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গতকাল এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত ভেন্ডাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।


আরও পড়ুন

×