কিস্তিতে সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে বিপাকে ৩ হাজার কৃষক

ফাইল ছবি
দেবাশীষ ভট্টাচার্য, শেরপুর
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২২ | ০৪:০০
'গ্রামীণ শক্তি' নামে একটি এনজিও থেকে কিস্তিতে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেলসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি কিনে বিপাকে পড়েছেন শেরপুরের প্রায় তিন হাজার কৃষক। এর মধ্যে প্রতারণার মামলা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার আড়াই শতাধিক কৃষক। উকিল নোটিশ পেয়েছেন নালিতাবাড়ী উপজেলার সাড়ে চার শতাধিক কৃষক। এ উপজেলায় প্রায় দেড়শ কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
প্রতিকার চেয়ে বুধবার জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন শ্রীবরদী উপজেলার শতাধিক কৃষক। তাঁদের দাবি, গ্রামীণ শক্তির সঙ্গে কোনো প্রতারণা করেননি তাঁরা; বরং গ্রামীণ শক্তিই তাঁদের ঠকিয়েছে এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
জানা গেছে, ২০০৬ সালে শেরপুরে কার্যক্রম শুরু করে গ্রামীণ শক্তি নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)। পাঁচটি উপজেলায় কার্যালয় স্থাপন করে প্রতিষ্ঠানটি।
শ্রীবরদী উপজেলার কয়েকশ কৃষক জানান, ২০১০-১১ সালে ভায়াডাঙ্গা বাজারে কার্যালয় নেয় গ্রামীণ শক্তি। পরে বিভিন্ন গ্রামের কৃষকের কাছে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বিক্রি শুরু করে। এ জন্য এককালীন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। বাকি টাকা ৩৬ কিস্তিতে পরিশোধের চুক্তি করে প্রতিষ্ঠানটি। সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থায় প্যানেলের ওয়ারেন্টি ২০ বছর এবং ব্যাটারির ওয়ারেন্টি দেওয়া হয় ৫ বছর।
এ ছাড়া বাতির ইনভার্টার ও চার্জ কন্ট্রোলারের ওয়ারেন্টি দেওয়া হয় তিন বছর। এসব স্থাপনের কিছুদিন পরই ব্যাটারি ও প্যানেল কাজ না করায় গ্রামীণ শক্তির স্থানীয় কার্যালয়ে অভিযোগ দেওয়া শুরু হয়। পাশাপাশি নিয়ম মেনেই কিস্তির টাকা পরিশোধ করে যাচ্ছিলেন ভুক্তভোগীরা। জেলায় সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা কাজ না করায় ২০১৬ সালে হঠাৎ সব কার্যালয় বন্ধ করে দেয় গ্রামীণ শক্তি। এরপর প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
বালিজুরি খারামোড়া গ্রামের কৃষক রফিক মিয়ার ভাষ্য, তাঁকে সোলার প্যানেলের সঙ্গে পুরোনো ব্যাটারি দেওয়া হয়েছিল। এটি প্রথম দিন থেকেই কাজ করছিল না। বিষয়টি জানানোর পর নতুন ব্যাটারি দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু দ্বিতীয় দফায়ও পুরোনো ব্যাটারি দেওয়া হয়। কয়েকটি কিস্তি পরিশোধ করেন তিনি। একদিন দেখেন- এলাকা ছেড়ে চলে গেছে গ্রামীণ শক্তি।
রাঙ্গাজান গ্রামের কৃষানি মরিয়ম বেগম জানান, ৩৬ হাজার টাকা দিয়ে সোলার প্যানেল নেওয়ার পর দেখেন পুরোনো ব্যাটারি দিয়েছে। পাল্টাতে গেলে ফের পুরোনো ব্যাটারি দেওয়া হয়। তাঁর কিস্তির ৩৩ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। আর তিন হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। অথচ এখনও সাড়ে আট হাজার টাকা দাবি করা হচ্ছে তাঁর কাছে।
বুধবার শ্রীবরদী সিআর আমলি আদালতে হাজিরা দিতে আসেন বালিজুরি গ্রামের ১১ কৃষক। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছেন গ্রামীণ শক্তির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মনিরুল ইসলাম। মামলায় বলা হয়েছে- আসামিরা প্রতারক ও দস্যু প্রকৃতির। টাকা চাইতে গেলে তাঁরা কোম্পানির লোকদের মারধর করে, হুমকি দেয়। এসব অভিযোগ শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ কৃষক নবাব মিয়া (৭০)।
শেরপুর আদালতের আইনজীবী দিপঙ্কর সরকার দিপুর ভাষ্য, নালিতাবাড়ীতে প্রায় ৫০০ লোককে উকিল নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অন্তত ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ১৫ জনকে জামিন করিয়েছেন তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে গ্রামীণ শক্তির কর্মচারী মনিরুল ইসলাম বলেন, 'অনেক টাকা বকেয়া পড়েছে। কেউ টাকা দিতে চায় না। তাই প্রথমে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি। টাকা না দেওয়ায় প্রায় ২০০ লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। টাকা দিয়ে দিলে মামলা তুলে নেওয়া হবে।' সৌরবাতির ওয়ারেন্টির কী হবে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'কারও প্যানেল নষ্ট হলে ঠিক করে দেব। এর বেশি কিছু করা সম্ভব নয়।'
জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার জানান, ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে একটি আবেদনপত্র দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- বিষয় :
- সৌরবিদ্যুৎ
- প্রতারণা মামলা