ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা গৃহবধূ জ্যোৎস্না বেগম- সমকাল

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২২ | ২৩:৫১

যৌতুকের জন্য জ্যোৎস্না বেগম নামের গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার দেবিদ্বার উপজেলার ধামতী গ্রামের উত্তর পাড়ার দুলাল মিয়ার বাড়িতে নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে শাশুড়ি জুলেখা বেগমকে আটক করেছে পুলিশ। অভিযানের খবর পেয়ে আত্মগোপন করেছেন অন্য অভিযুক্তরা।

স্থানীয়রা জানান, বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা এনে দিতে গত বুধবার বিকেলে গৃহবধূকে চাপ দেন তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। টাকা আনতে রাজি না হওয়ায় শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদেরা মিলে নারকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে তাঁর ওপর নির্যাতন চালান। স্থানীয়দের চাপে ভুক্তভোগীর হাতের বাঁধন খুলে দেন। তবে ঘরে আটক রেখে রাতে আবারও তাঁকে নির্যাতন করেন অভিযুক্তরা। খবর পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে স্বজনদের বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে দেবিদ্বার থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সারোয়ার তালুকদার একদল পুলিশ নিয়ে রাত ১১টার দিকে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করেন।

গৃহবধূ জ্যোৎস্নার ভাষ্য, প্রায় ১৬ বছর আগে ধামতী গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে হেলালের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের সময় বরপক্ষকে দেড় লাখ টাকা যৌতুক দেওয়া হয়। বিয়ের পরপরই বাবা মারা যান। এরই মধ্যে তাঁদের সংসারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জন্ম হয়। প্রায় ১২ বছর আগে তাঁর স্বামী ওমান যাওয়ার সময় আরও দুই লাখ টাকার জন্য চাপ দিলে এক লাখ টাকা দেন তাঁর ভাইয়েরা। বছরখানেক আগে দেশে ফিরে আরও এক লাখ টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন তাঁর স্বামী। হেলাল আবার বিদেশ চলে যাওয়ার পর তাঁর শ্বশুর দুলাল মিয়া, শাশুড়ি জুলেখা বেগম, ননদ মৌসুমী ও পাখী নির্যাতন করতে থাকেন। তাঁদের মারধরে দাঁতগুলোও নড়বড়ে হয়ে গেছে। গত বুধবার বিকেলেও এক লাখ টাকার জন্য তাঁকে গাছে বেঁধে এবং ঘরে আটকে নির্যাতন করা হয়।

নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর মা ফরিদা বেগম বলেন, 'মেয়েকে বহুবার নিয়ে আসতে চেয়েছি। সন্তানদের মায়া করে আসেনি। গত ১৫ বছরে অন্তত ১০-১২ বার সালিশ হয়েছে। ছেলের পক্ষ সালিশের রায় মেনে পরে উল্টোটা করে। এখন আর কেউ সালিশ করতে আসেন না। আমার আত্মীয়স্বজনও যান না। আমরা গরিব মানুষ, কত টাকা দিতে পারি! আমার চার ছেলে দিনমজুর।'

ভুক্তভোগীর ভাই জামাল হোসেন বলেন, 'বোনকে উদ্ধারে তাঁদের বাড়ি গেলে আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে পুলিশের সহায়তায় তাঁকে উদ্ধার করি।'

দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর জানান, অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগীর শাশুড়ি জুলেখা বেগমকে আটক করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন।

আরও পড়ুন

×