যমুনায় নাব্য সংকট
জ্বালানি-সারের খরার আশঙ্কা উত্তরাঞ্চলে

ছবি: ফাইল
এবিএম ফজলুর রহমান, পাবনা
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০
চলতি বছরের শুস্ক মৌসুম শুরু হতে না হতেই ভয়াবহ নাব্য সংকটে পড়েছে যমুনার কয়েকটি নৌপথ। মাঝ রাস্তায় প্রায় ৬২ লাখ লিটার জ্বালানি তেলবাহী ১১টি ট্যাঙ্কার, সারবাহী কার্গো, লাইটারসহ ২৫ থেকে ২৬টি জাহাজ আটকে পড়ায় মাথায় হাত বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দর কর্তৃপক্ষের। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত এই বন্দরে আছে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম জ্বালানি তেল ও সারের ডিপো। এখন থেকে জোগান নিয়ে ১৬ জেলার কৃষকের চাহিদা পূরণ করেন ডিলাররা। আমদানি পণ্য নিয়ে নতুন জাহাজ বন্দরে ভিড়তে না পারায় নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে আপৎকালীন মজুত দিয়ে। কিন্তু তাও চার থেকে পাঁচ দিনের বেশি চলবে না বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে পাবনাসহ উত্তরের কৃষিতে। যথাসময়ে সেচ দিতে ও সার সংগ্রহ করতে না পারলে আশঙ্কাজনক হারে কমে যেতে পারে বোরো উৎপাদন।
নৌবন্দর সূত্র জানিয়েছে, বাঘাবাড়ীর ২০ কিলোমিটার ভাটিতে পাবনার বেড়া উপজেলার কৈটোলায় আটকা পড়েছে ভারী নৌযানগুলো। এর মধ্যে কয়েকটি আশপাশের ঘাটে নোঙর করা গেলেও অধিকাংশই রয়ে গেছে মাঝনদীতে। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে সেগুলো আটকে থাকায় ক্রমেই তেলশূন্য হয়ে পড়ছে বাঘাবাড়ী ডিপোর আপৎকালীন মজুত। এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় পাবনার কাজীরহাটে অস্থায়ী তেল ডিপো স্থাপন করার কথা থাকলেও সেটিও নির্মাণ করা হয়নি।
জানা গেছে, বাঘাবাড়ী অয়েল ডিপো থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় গড়ে প্রতিদিন ২৭ লাখ লিটার জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে ডিজেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। চলতি সেচ মৌসুমে প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ লাখ লিটার ডিজেলের জোগান দিতে হয়। গতকাল শনিবার পর্যন্ত বাঘাবাড়ী অয়েল ডিপোর পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা- তিনটি কোম্পানির বিপণন কেন্দ্রে এক কোটি ৬৫ লাখ ৯১ হাজার লিটারের মতো ডিজেল মজুত আছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এই পরিমাণ মজুত থাকলেও ৪ থেকে ৫ দিনের বেশি যাবে না। তবে প্রকৃত পরিমাণ আরও কম হতে পারে। এর মধ্যে সমস্যা সমাধান না হলে শূন্য হাতে ফেরাতে হবে উত্তরের ডিলারদের।
সূত্র জানায়, যমুনা নদীর মোহনগঞ্জ, পেঁচাকোলা, নাকালিয়া, হরিরামপুর, মাছখালী, রাকসা ও নগরবাড়ী পয়েন্টে ড্রেজিংয়ের জন্য বিআইডব্লিউটিএর কাছে তাগিদ দিয়ে একাধিকবার চিঠি দেয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি সংস্থাটি, নেয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। নামকাওয়াস্তে একটি ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত ড্রেজিং করলেও তাতে কোনো সমাধান আসছে না।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ের লিয়াজোঁ অফিসার শামীম আহমেদ জানান, এ বছর উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার বোরো আবাদের জন্য ১৪টি গুদামে আগে থেকেই ২ লাখ ৮০ হাজার টন সার মজুত আছে। এরপরেও আরও ৯ লাখ টন সার বিভিন্ন পথে আমদানি করা হচ্ছে। তবে এর সিংহভাগ বাঘাবাড়ী নৌবন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়। এ নৌ রুটে নাব্য সংকট হওয়ায় আপৎকালীন সার মজুত বিঘ্নিত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাঘাবাড়ী বন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, কাজীরহাট ঘাট হয়ে ২৫ থেকে ২৬টি ট্যাঙ্কার, কার্গো ও লাইটার জাহাজ এই বন্দরে ভেড়ার কথা ছিল আরও ১০ দিন আগে। নাব্য সংকটের কারণে সেগুলো যমুনার মাঝপথে আটকা পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ড্রেজিং না করলে সমস্যার সমাধান হবে না।
বন্দরের ইজারাদার আবুল হোসেন বলেন, আটকে থাকা জাহাজগুলো থেকে তেল ও সার অন্য উপায়ে তথা ছোট ছোট নৌযানে করে আনতে চাইলে ব্যয় বেড়ে যাবে বহু গুণ। একে তো সংশ্নিষ্ট জাহাজগুলোকে অতিরিক্ত দুই থেকে তিনগুণ ভাড়া দিতে হবে। এর ওপর বিকল্প যানের ব্যবস্থা করলে তাতেও চড়ামূল্য দিতে হবে। এতে আমদানিকারকরা ব্যাপক লোকসানে পড়বেন।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বোরো মৌসুম শুরু হয়েছে। এখন উত্তরে সার ও তেলের চাহিদা তুঙ্গে। সময়মতো জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে না পারলে সেচ কার্যক্রম থমকে যাবে। এতে উৎপাদনে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া নিয়েও আশঙ্কা দেখা দেবে।
বিআইডব্লিউটিএ বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান আছে। আট ফুট গভীরের জাহাজগুলোর আসতে সমস্যা হচ্ছে না। তবে যেগুলো ১২-১৩ ফুট ডিপের সেগুলো আসতে পারছে না। সংশ্নিষ্ট আমদানিকারকদের বলা হয়েছে, তাঁরা যেন ছোট ছোট নৌযানে করে আটকে থাকা জাহাজগুলোর পণ্য বন্দরে আনার ব্যবস্থা করেন।
- বিষয় :
- নাব্য সংকট