ধর্মীয় পরিচয়ে আটকে আছে রতনের শেষ বিদায়

পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৬:০৮ | আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৬:০৮
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে গত রোববার থেকে পড়ে আছে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এক যুবকের মরদেহ। এরই মধ্যে তাঁর পরিবারের লোকজন হাসপাতালে এসে লাশ শনাক্ত করেছেন। তাঁরা বলছেন, ওই যুবকের নাম রতন দাশ। তিনি মিরসরাই উপজেলার মৃত মনোরঞ্জন দাশ ও সন্ধ্যা রানী দাশের একমাত্র ছেলে।
তবে জটিলতা দেখা দিয়েছে রতনের মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি হলফনামাকে কেন্দ্র করে। রতনের বন্ধুদের দাবি, ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নোটারি পাবলিক করে রতন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বর্তমান নাম আহমাদ। নিহতের ধর্মপরিচয় শনাক্তের এই দ্বন্দ্ব পৌঁছে গেছে আদালত পর্যন্ত। আটকে গেছে শেষকৃত্য।
আদালত জানিয়েছেন, ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে দ্বন্দ্ব আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত লাশ হিমঘরে থাকবে। এখন কোনোভাবেই ওই যুবকের লাশ কারও কাছে হস্তান্তর করা হবে না।
পুলিশ জানায়, নোটারি পাবলিক করা ওই হলফনামাটি সত্যি নাকি বানানো- তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হলফনামা অনুসারে ওই যুবক দুই বছরেরও বেশি সময় আগে ধর্মান্তরিত হন। মৃত্যুর পর পরিবার এবং তাঁর কিছু বন্ধু মরদেহের দাবিদার হিসেবে থানায় হাজির হয়েছেন। এ অবস্থায় পুলিশ গত রোববার রাতে একটি মামলা দায়ের করে চমেক হাসপাতালের মর্গে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। সেই মামলার জেরে আজ সোমবার পটিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এক রায়ে নিহতের ধর্মীয় পরিচয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মরদেহ হিমঘরে রাখার নির্দেশ দেন। গতকাল রোববার দুপুরে পটিয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহত হন ওই যুবক।রতনের মা সন্ধ্যা রানী দাশ দাবি করেন, তাঁর ছেলে মুসলমান হয়নি। ছড়িয়ে পড়া হলফনামাটি ভুয়া। ছেলে তাঁর সঙ্গে থাকত। সে হিন্দু ধর্মের অনুশাসন পালন করত। শনিবার রাতেও সে বাসায় পূজা দিয়েছে।
ছেলের মুখে থাকা দাড়ি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজকাল সবাই দাড়ি রাখে, সেও রেখেছে।
পটিয়া হাইওয়ে পুলিশের ওসি স্নেহাংশু বিকাশ সরকার সমকালকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় লরির চাপায় রতন দাশের মাথাটি বিকৃত হয়ে গেছে। রোববার সন্ধ্যায় পরিবারের লোকজন এসে তাঁকে শনাক্ত করেন। এরপর আমরা জানতে পারি, তিনি দুই বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এটি জানার পর আমরা তাঁর হিন্দু মা ও খালুর কাছে মরদেহ হস্তান্তর না করে আদালতে যাই। ধর্ম পরিচয় নিয়ে বিরোধ যতদিন নিষ্পত্তি না হবে ততদিন লাশটি চমেক হাসপাতালে হিমঘরে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।