ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

চাপ সইতে না পেরে আত্মগোপনে ছিলাম, ফিরে এসে বললেন 'নিখোঁজ' প্রার্থী

চাপ সইতে না পেরে আত্মগোপনে ছিলাম, ফিরে এসে বললেন 'নিখোঁজ' প্রার্থী

আবু আসিফ আহমেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৫:৪৫ | আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৬:১৩

ভোটের পরদিন বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে এসেছেন বহুল আলোচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তারের প্রতিদ্বন্দ্বী আবু আসিফ আহমেদ। গত শুক্রবার লাপাত্তা হওয়া এই নেতা বাসায় ফিরে দাবি করেছেন, ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর চাপ সইতে না পেরে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।

এর আগে আজ বিকেলে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বরাত দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন জানান, আসিফ আহমেদের খোঁজ মিলেছে। তিনি রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় নিজ বাসায় ছিলেন।

এর কিছুক্ষণ পর বিকেল সোয়া ৫টায় আশুগঞ্জের স্টেশন রোডের বাসায় ফেরেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাবেক সভাপতি আসিফ আহমেদ। আশুগঞ্জ থানার ওসি আজাদ রহমান সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এলাকায় ফিরলেও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি তিনি। তবে ভিডিও বার্তায় নিজের বক্তব্য জানান।

ভিডিও বার্তায় আসিফ বলেন, প্রথম থেকেই এ নির্বাচনকে কেমন যেন অগোছালো মনে হয়েছে। নির্বাচন যখন কাছাকাছি সময় আসছে, বেশি চাপ অনুভব করায়, আমি নিজেই চলে গেছি। এই চাপ নিয়া (নিয়ে) আমি থাকতে পারব না। এই জন্য আমি নির্বাচন ছাইড়া (ছেড়ে) চলে গেছি। নির্বাচন শেষ হইছে। আমি বাসায় চইলা আসছি।

তবে কে চাপ দিয়েছিল, কোথায় ছিলেন- এসব প্রশ্নের উত্তর খোলাসা করেননি আসিফ আহমেদ। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি কথা বলতে চাইলে পাশ থেকে তার স্ত্রী মেহেরুন্নেসা বাধা দেন।

এর আগে গত শনিবার থেকে আসিফের স্ত্রী অভিযোগ করছেন, তার স্বামীর খোঁজ নেই। স্বামীর সন্ধান চেয়ে গত সোমবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছেও অভিযোগ দেওয়ার পাশাপাশি থানায় সাধারণ ডায়রি করেন। একইদিন আসিফ আহমেদকে খুঁজে বের করতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন নির্বাচন কমিশন।

এর পরদিন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান জানান, তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, আসিফ আহমেদ আত্মগোপনে রয়েছেন।

গত ডিসেম্বরে দলীয় সিদ্ধান্তে অন্য এমপিদের সঙ্গে পদত্যাগ করেন উকিল আবদুস সাত্তার। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে ৪৩ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে পদত্যাগের মাত্র ২০ দিন পর নিজের ছেড়ে দেওয়ার আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হন। তাকে জেতাতে ওই আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। এমনকি দলটির তিন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও সরে গিয়ে উকিল সাত্তারের হয়ে প্রচার চালান। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি জিয়াউল মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও উকিল সাত্তারকে সমর্থন জানিয়ে বসে পড়েন।

চার প্রার্থী সরে যাওয়ায় আসিফ আহমেদ ছিলেন উকিল সাত্তারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তাকেও নির্বাচন থেকে সরাতে চাপ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় উকিল সাত্তারের মতো আসিফ আহমেদও বিএনপি থেকে বহিষ্কার হন। তবে নির্বাচনের মাত্র পাঁচদিন আগে তিনিও লাপাত্তা হয়ে যাওয়ায় ছেড়ে দেওয়া আসনে উকিল সাত্তারের এমপি হওয়া ছিল শুধু সময়ের ব্যাপার।

এদিকে আসিফ আহমেদ লাপাত্তা হওয়ার দু'দিন আগে পুরনো মামলায় তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্টকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরই মধ্যে গত শুক্রবার মোবাইল ফোন বাসায় রেখে আসিফ লাপাত্তা হন। এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ফোনালাপ অনুযায়ী, আসিফ আত্মগোপনে ছিলেন। তবে ওই ফোনালাপের সত্যতা যাচাই করেনি সমকাল।

স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র সমকালকে আগেই জানিয়েছিল, নির্বাচন না করার সমঝোতা করে ঢাকার বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন আসিফ আহমেদ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, তিনি কীভাবে এবং কেন নিখোঁজ হয়েছিলেন, তা জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে।

আরও পড়ুন

×