ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ইটভাটায় ফসলি জমির সর্বনাশ

ইটভাটায় ফসলি জমির সর্বনাশ

দোহারের মাহমুদপুর ইউনিয়নে ইটভাটার জন্য ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে - সমকাল

মাহবুবুর রহমান টিপু, দোহার (ঢাকা)

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১১:৩৯

ঢাকার দোহার উপজেলায় যত্রতত্র গড়ে ওঠা ইটভাটার জন্য ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। ফসলি জমির প্রাণ টপ সয়েল দিয়ে বানানো ইট পোড়ানো হচ্ছে ইটভাটায়। এতে উর্বরতা হারিয়ে হুমকিতে পড়ছে ফসল উৎপাদন। অনেক স্থানের জমিতে পুকুর কেটে মাটি নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। কৃষি ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হলেও অজ্ঞাত কারণে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়দের প্রতিবাদ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে বিষয়টি আলোচিত হলেও নজরদারি নেই প্রশাসনের। কৌশলে এক্সক্যাভেটর (ভেকু) দিয়ে জমির মাটি কেটে নিয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। কৃষকদের টাকার লোভে ফেলে টপ সয়েল কিনে নিচ্ছেন ভাটা মালিকরা। কৃষক সাময়িক লাভবান হলেও আসলে নিজের ক্ষতি করছেন।

মাটি কেটে নেওয়ায় জমি নিচু হওয়ার ফলে চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটছে বলে জানা গেছে। এর সঙ্গে পুকুর খনন করায় কমছে আবাদি জমি। এ নিয়ে গত রোববার দোহারের ইউএনও মো. মোবাশ্বের আলম ও থানার ওসি মো. মোস্তফা কামালের কাছে ১০ জনকে দায়ী করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী। পরে মঙ্গলবার উপজেলার হরিচণ্ডি এলাকায় সরকারি খাসজমি থেকে মাটি কাটার অভিযোগে একটি ভেকু মেশিন জব্দ করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনও মোবাশ্বের আলম।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রসুলপুর ও ইসলামপুর চক থেকে জমির মাটি কেটে মাহিন্দ্রা গাড়ির মাধ্যমে অন্যের জমির ওপর দিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে। ফলে ফসল নষ্ট হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করলে ও মাহিন্দ্রা গাড়ি আটকালে সংশ্নিষ্টরা ক্ষিপ্ত হয়ে মারতে আসেন। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া ও মেরে ফেলার হুমকিও দেন।
পৌরসভার রসুলপুর এলাকার সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কৃষকদের ফসলি জমির মাটি জোর করে কেটে নিয়ে যাচ্ছেন ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ হয়েছে এলাকার কিছু বখাটে ছেলে। এ জন্য কৃষক ও জমির মালিকদের সঙ্গে নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা নিষেধ। তবে এ আইনের প্রয়োগ না থাকায় কৃষিজমির মাটি ইটভাটায় ব্যবহার হচ্ছে। প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে এক শ্রেণির দালাল দীর্ঘদিন এ ব্যবসা করছেন। মাটি পরিবহন করায় নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক।

এসব সড়ক ব্যবহারে নীতিমালা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ধুলাবালিতে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। ভাটার কালো ধোঁয়া বাতাসে মিশে দূষিত হচ্ছে বায়ু। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ডিসির অনুমতিসহ লাইসেন্সপ্রাপ্তির সাপেক্ষে ভাটা স্থাপনের নিয়ম রয়েছে। আবাসিক এলাকায়, জলাভূমি ও বাগান এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। তবে নিয়ম না মেনেই ভাটা স্থাপন করা হয়েছে।

জানা গেছে, মুকসুদপুরের মধুরখোলা, নারিশার উত্তর শিমুলিয়া (জালালপুর) আবাসিক এলাকায় চলছে ইটের ভাটা। সুতারপাড়ার উত্তর ডায়ারকুম-ডাইয়াগজারিয়ায় পাঁচটি, রাইপাড়ার ইসলামপুরে পাঁচটি ও মাহমুদপুরে রয়েছে একটি ইটভাটা। এ ছাড়া উপজেলায় আরও অন্তত ১৫-২০টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটায় শিশুশ্রম ও শ্রমিক নির্যাতনেরও অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে ডিবিএফ ভাটার পরিচালক মুরাদ হোসেন খান বলেন, দোহারে সব ইটভাটা কৃষিজমির পাশে গড়ে তোলা হয়েছে। পিবিএফ ইটভাটার পরিচালক ও পৌর কাউন্সিলর জাহিদ বেপারী মোবাইল ফোনের সাংবাদিক পরিচয় জেনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

একতা ইটভাটার পরিচালক রহিম শেখ বলেন, সুতারপাড়া ইউনিয়নের বোয়ালির চকে আরও পাঁচটি ইটভাটা রয়েছে। আইন অমান্য করলে সবাই করেছে। একই এলাকার কেবিএফ ইটভাটার পরিচালক মো. বোরহান উদ্দিন জানান, ইটভাটার মালিক আরও চারজন রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি। একই প্রতিষ্ঠানের আবুল কাশেম সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তদন্ত চলছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইন অমান্য করে ইটভাটা চালালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দোহার থানার ওসি মোস্তফা কামাল বলেন, অভিযোগের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন দেখবে। তিনি অভিযানে পুলিশ পাঠাবেন। ইউএনও মো. মোবাশ্বের আলম বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে কৃষিজমি রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×