ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

লোকসানের শঙ্কায় পেঁয়াজ চাষিরা

লোকসানের শঙ্কায় পেঁয়াজ চাষিরা

কুমারখালীর জোতমোড়া গ্রামে শনিবার পেঁয়াজ ক্ষেতে কাজ করছেন শ্রমিকরা- সমকাল

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ০৮:৪৭

আগের দুই বছর পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পাননি চাষিরা। এ বছর ভেজাল বীজ ও অতিরিক্ত ঠান্ডায় অনেক ক্ষেতে রোপণ করা চারা মরে গেছে। প্রয়োজনের তুলনায় বৃষ্টিপাতেরও দেখা নেই।

এসব কারণে পেঁয়াজের ফলন এবং ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাষিদের। তাঁরা এখন ক্ষেতে আঁচড়ানো, নিড়ানি, কীটনাশক ও সার ছিটানো, সেচ দেওয়াসহ নানা কাজ করছেন। তবে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭৯০ হেক্টর আবাদ কম করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

চাষিরা বলছেন, জ্বালানি তেল, সার, কীটনাশকসহ চাষাবাদে আগের চেয়ে খরচ বেড়েছে অনেক। এসব কারণে আবাদ কিছুটা কমে গেছে। অল্প খরচে অধিক লাভের আশায় গম, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলে আগ্রহ বাড়ছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলায় পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৫১০ হেক্টর। ভেজাল বীজ ও আবহাওয়াজনিত কারণে প্রায় ৩০ হেক্টর ক্ষতি হয়েছে। হেক্টরপ্রতি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে ১৫ দশমিক ৫ টন।

শনিবার উপজেলার যদুবয়রা, পান্টি, চাঁদপুর, বাগুলাট ও চাপড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ ক্ষেত আঁচড়ানো, আগাছা পরিস্কার, কীটনাশক ও সার ছিটানো, সেচ দেওয়াসহ নানা কাজ করছেন কৃষকরা।

এ সময় কথা হয় যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের কৃষক মো. ওলিন শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত বছর লসে (লোকসান) পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন তিনি। এ বছর সাড়ে তিন বিঘায় পেঁয়াজের চারা রোপণ করেছেন। এর মধ্যে ভেজাল বীজের কারণে এক বিঘার চারা মরে গেছে। পরে সেখানে তিনি ভুট্টার আবাদ করেছেন। এখন পর্যন্ত পেঁয়াজে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এই চাষির।

একই গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম বলেন, তাঁর আড়াই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ গাছ বেশ ভালো আছে এখনও। বৃষ্টি হলে আরও ভালো হতো। পেঁয়াজ ঘরে তোলা এবং ন্যায্যমূল্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি।

পান্টি ইউনিয়নের ভালুকা গ্রামের কৃষক মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ৫ বিঘায় উৎপাদন খরচেরও কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করেছিলেন। সেজন্য এবার আড়াই বিঘায় চাষ করেছেন তিনি।

একই গ্রামের পেঁয়াজ চাষি জান্নাত ফেরদৌস বলেন, প্রতি বিঘায় রোপণে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। আর ফসল ঘরে তুলতে খরচ বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৪০-৪২ হাজার টাকায়। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৫৫ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রত্যাশা করছেন তিনি।

বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রামের কৃষক করিম মণ্ডল বলেন, পেঁয়াজ তোলার মৌসুমে অন্তত ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে মণ পেঁয়াজ বিক্রি করতে না পারলে এ বছরও লোকসানে পড়বেন কৃষকরা। তাঁর ভাষ্য, পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ না করলে ধীরে ধীরে চাষ বন্ধ করে দেবেন কৃষক।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস বলেন, ভেজাল বীজ ও আবহাওয়াজনিত কারণে চারা মরে যাওয়ায় পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় গম ও ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়িয়েছেন কৃষক।

আরও পড়ুন

×