ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

জিকে প্রকল্পের সেচপাম্প নষ্ট

অনাবৃষ্টি, বোরো ক্ষেত চৌচির

অনাবৃষ্টি, বোরো ক্ষেত চৌচির

চকরিয়া (কক্সবাজার) ও হরিণাকুণ্ডু (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৩ | ০৩:৫০

দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির কারণে নদী-নালা, খাল শুকিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে মিঠা পানির শূন্যতা। বিস্তীর্ণ বোরো ধানক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষক।

প্রতি বছর চকরিয়ার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বোরো আবাদ হয়ে থাকে। বোরো ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে কক্সবাজার জেলায় চকরিয়া শীর্ষে। কিন্তু মিঠা পানির অভাবে চকরিয়ার উপকূলীয় সাহারবিল, পূর্ব বড় ভেওলা, বি.এম. চর, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড় ভেওলা, বদরখালী, বরইতলী, চিরিংগা ও পৌর সদরে শত শত হেক্টর বোরো ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।

কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, একটানা অনাবৃষ্টির ফলে মাতামুহুরী নদীসহ শাখা খালগুলোতে পানির প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে। এতে অনেক ধানক্ষেতে সেচ কার্যক্রম চালাতে পারছেন না কৃষক।

ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঈনুদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, জলমহালে নোনাপানি না থাকলেও মিঠাপানির অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে তার ইউনিয়নে রোপিত অনেক বোরো ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে উপকূলের অপর ছয়টি ইউনিয়নেও। এসব ইউনিয়নের মধ্যে বদরখালীতে বসানো নলকূপে খাবার পানিও পাওয়া যাচ্ছে না।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন বলেন, চকরিয়ায় চলতি মৌসুমে ১৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। পানি সংকট দেখা দিয়েছে উপকূলের ৭ ইউনিয়ন, পৌর সদর ও চিরিংগা ইউনিয়নে। স্বল্প সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হলে অন্তত এক হাজার হেক্টর বোরো ক্ষেত নষ্ট হতে পারে।

ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের কৃষক গিয়াস উদ্দিন ও ছিদ্দিক আহমদ জানান, পানি সংকটের কারণে তাদের রোপিত বেশিরভাগ বোরো ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। চিরিংগা ইউনিয়নের মহিউদ্দিন দাবি করেছেন, মাছঘাট খালে পানি না থাকায় তাঁদের রোপিত ধান ইতোমধ্যে বিবর্ণ হয়ে গেছে।

সূত্রমতে, মাতামুহুরী নদীর পানি আটকিয়ে বোরো ও সবজি চাষের জন্য বাঘ-গুজারা ও পালাকাটা পয়েন্টে দুটি রাবারড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। এতে মাতামুহুরী নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় শাখা খাল দিয়ে পানি ধানক্ষেতে সেচ কার্যক্রম চালাতে পারছেন না কৃষক। বিষয়টি স্বীকার করেছেন ইউএনও জেপি দেওয়ান।

এদিকে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে মধ্য জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে বোরো ধানের আবাদ। জিকে সেচ প্রকল্পের পানির আশায় উপজেলায় ধানের চাষাবাদ করেছিলেন কৃষক। ধানের চারা রোপণের সময় পানি দেওয়া হলেও পরে আর পানি দেয়নি গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প (জিকে) কর্তৃপক্ষ।

প্রায় ছয় মাস ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় ভরা মৌসুমেও শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে ধানক্ষেত। সুযোগ বুঝে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা সেচ পাম্পের মালিকরা পানির দাম বাড়িয়েছেন কয়েক গুণ। এতে চলতি মৌসুমে বোরো চাষ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন হাজার হাজার কৃষক। কৃষি দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, জিকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ চলছে । তবে পাম্প নষ্টের দাবি করেছে জিকে কর্তৃপক্ষ।

এবার উপজেলায় বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৩০০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৩০৬ হেক্টর জমিতে। প্রায় ২৪ হাজার কৃষক বোরো ধানের আবাদ করেছেন।

ইতোমধ্যে মৌসুমের প্রায় দুই মাস পেরিয়েছে। বাড়তে শুরু করেছে ধানের চারা। এখন ক্ষেতে পানির প্রয়োজন। না হলে শুকিয়ে ধান নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

উপজেলার বলরামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম জানান, তিনি এবার ১৩ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘা ধান চাষে তাঁর প্রায় ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এখন ধান বাড়তে শুরু করেছে। ক্ষেতে পানি না দিলে শুকিয়ে নষ্ট হতে পারে। তবে বৃষ্টি নেই। জিকে সেচ প্রকল্পের পানিও মিলছে না। বাধ্য হয়ে তাঁরা ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে ওঠা সেচ পাম্প মালিকদের কাছ থেকে চড়া মূল্যে পানি নিচ্ছেন। প্রতি বিঘা জমিতে পানি দিতে নেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার  থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে তাঁর সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি ধান উৎপাদনে ব্যয় পড়বে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। তিনি দাবি করেন, বর্তমানে যদি ক্ষেতে ভালো ফলনও হয়, তাতেও প্রতি বিঘা জমিতে ২০ মণের বেশি ধান হবে না। ফলে এবার উৎপাদন ব্যয় উঠবে না।

সেচ পাম্প মালিক জমির উদ্দিন দাবি করেন, গত বছরের চেয়ে এবার প্রতি লিটারে ডিজেলের দাম বেড়েছে ৩৪ টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে শ্রমিকের মজুরি। পানির দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাফিজ হাসান জানান, চারা রোপণের সময় জিকে সেচ কর্তৃপক্ষ পানি দিয়েছিল। এখন ধান গাছ বাড়তে শুরু করেছে। ক্ষেতে পানির প্রয়োজন। তিনি অনেকবার জিকে সেচ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন; কিন্তু পাম্প নষ্টের দাবি করে তাঁরা পানি দিচ্ছেন না।

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপপ্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তালেব বলেন, তাঁদের তিনটি সেচপাম্পের দুটিই নষ্ট। এগুলো মেরামতের চেষ্টা চলছে। তাঁরা দ্রুত পাম্পগুলো সচল করার চেষ্টা করছেন। সচল হলেই পানি দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×