ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ব্রি-২৮ ধান নিয়ে বিপাকে কৃষক

ব্রি-২৮ ধান নিয়ে বিপাকে কৃষক

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ | ১৩:৫৩ | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ | ১৩:৫৩

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েকশ কৃষকের জমির পুরো ধানই নষ্ট হয়ে গেছে। ব্রি-২৮ জাতের এসব নষ্ট হওয়া ধান কেউ গরুর জন্য কেটে নিচ্ছেন, কেউ জমিতেই ফেলে রেখেছেন। এতে নিজেদের পরিবারের খাবার জোগানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপণে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অন্যদিকে কৃষকরা বলছেন, বাজারে বীজ ঘরগুলোতে গেলে উচ্চ ফলনশীল বলে তারা এ ধান তাঁদের কাছে বিক্রি করে।

শ্রীমঙ্গল হাইল হাওরের বোরো চাষি ইউছুপ মিয়া বলেন, তিনি হাওরের নিচু অংশে ১৫ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেছেন। ধান যখন পাকতে শুরু করছে, তখন লক্ষ্য করেন তাঁর জমির সব ধান চিটা। কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়েও কোনো কাজ হয়নি। তিনি জানান, তাঁর নিজের গ্রাম ইউছুপুর, পার্শ্ববর্তী নোয়াগাঁও, রাজাপুর ও উত্তরভাড়াউা গ্রামের কয়েকশ কৃষকের শত শত একর জমির বোরো ধান চিটা হয়েছে।

একই গ্রামের কৃষক জোবায়ের মিয়া তাঁর জমির ধান দেখিয়ে বলেন, ব্রি-২৮ ধানের আবাদে তাঁরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ক্ষেতের পর ক্ষেত চিটায় ভরে গেছে। তিনি বলেন, ৭৫ হাজার টাকা খরচ করে ১২ কিয়ার জমি চাষ করেছিলেন। সবই শেষ। এবার চাল কিনে খেতে হবে।

নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক অঞ্জু কর জানান, নিজের জমি নেই। সাত বিঘা জমি বর্গা চাষ করেছেন। মানুষের কাছ থেকে ঋণ করে এনে চাষ করেছেন। এখন তিনি পথে বসার উপক্রম।

ইউছুপুর গ্রামের কৃষক শামীম মিয়া জানান, এভাবে দুর্যোগ আসবে তাঁরা ভাবতেও পারেননি। তিনি বলেন, পুরো ধানের ছড়ার প্রায় ৯০ ভাগ ধান চিটা। ১০ ভাগ ভালো থাকলেও কাটানো ও মাড়াই খরচ দিয়ে তা  কৃষকদের ক্ষতিই বাড়াবে।  যে কারণে কৃষকদের কেউই ধান কাটার চিন্তা করছেন না। অনেকে তা কেটে নিয়ে গরুকে খাওয়াচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জানান, শ্রীমঙ্গলে ১১ হাজার ৪৫১ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি-২৮ আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৬৫১ হেক্টর। যার মধ্যে বেশ কিছু অংশ ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়। যখন এটি প্রথম ধরা পড়ে, তখন পাতা একটু একটু মরতে শুরু করে। তখনই কৃষকদের দুই রাউন্ড ছত্রাক নাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ইউরিয়ার পরিবর্তে পটাশিয়াম সার ব্যবহারের পরামর্শ দেন। অনেক কৃষক এই অল্প পাতা মরায় কিছু হবে না ভেবে ছত্রাকনাশক স্প্রে করেননি। কেউ কেউ এক রাউন্ড স্প্রে করেছেন। কিন্তু যাঁরা ঠিকমতো নিয়ম মেনেছেন, তাঁদের ফসল নষ্ট হয়নি। তিনি বলেন, ব্রি-২৮ অনেক পুরোনো একটি জাত। এটি এখন চাষ করতে কৃষকদের তাঁরা নিরুৎসাহিত করেছেন। এর পরিবর্তে ব্রি-৮৮ ও ৮৯ চাষের জন্য পরামর্শ দেন।

শ্রীমঙ্গল কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রকেন্দ্র শর্মা জানান, তাঁদের অনুসন্ধান অনুযায়ী ১৬৮ বিঘা জমিতে ব্লাস্ট রোগে আক্রমণের উপস্থিতি পান। বিষয়টি লক্ষ্য করার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের এ থেকে উত্তরণের পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী ১০০ বিঘার বেশি জমির ধান নষ্ট হয়নি। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, মৌলভীবাজারের হাইল হাওর, কাউয়াদিঘি হাওর ও হাকালুকি হাওরের নিচু এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় আট হেক্টর এলাকায় বি-২৮ জাতের ধান ও বি-৪৮ জাতের ধান নষ্ট হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে এটি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান উৎপাদনে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাঁদের সহায়তার জন্য সরকারের কোনো বরাদ্দ এলে তাঁরা পাবেন। 

আরও পড়ুন

×