ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

গ্রামবাসীর ভালোবাসার মানুষ ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ

গ্রামবাসীর ভালোবাসার মানুষ ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ

চট্টগ্রামের রাউজানের কোয়েপাড়ার গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের সঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ - সংগৃহীত

তৌফিকুল ইসলাম বাবর, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৩ | ০৪:৩৩

গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে কোয়েপাড়ায় নিয়মিত যাওয়া হতো না ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর। তবে গ্রামের মানুষের প্রতি অন্যরকম টান ছিল তাঁর। এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে থাকতেন, নিয়মিত খোঁজখবর নিতেন। ফলে দূরে থাকলেও এলাকাবাসীর ভালোবাসার মানুষ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর খবর ছুঁয়ে গেছে এলাকার মানুষকে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে কোয়েপাড়াসহ গোটা এলাকায়। অনেকে নীরবে চোখের পানি ফেলছেন দরদি এই মানুষটির জন্য। ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর কোয়েপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি।

গতকাল বুধবার আত্মীয়স্বজন জানালেন, প্রতি বছর রমজানে এলাকার গরিব ও অসহায় লোকজনকে ইফতারসামগ্রী ও ঈদের পোশাক দিতেন ডা. জাফরুল্লাহ। ঈদুল আজহায় দিতেন মুরগি, আটা, ময়দা, সয়াবিন তেলসহ নানা সামগ্রী। শীতের আগে দিতেন কম্বল। এবারও ইফতারসামগ্রী দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী থাকায় তা সম্ভব হয়নি।

করোনা-পরবর্তী সময়ে এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়েছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ। সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন গ্রামের বাড়িতে। সর্বশেষ গত বছরের শেষ দিকে কোয়েপাড়ায় নুর মোহাম্মদ চৌধুরীর বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। এক রাত থেকেছিলেন। এলাকায় গেলেই মানুষের জটলা লেগে যেত। লোকজন নানা বায়না নিয়ে আসত। তাদের কথা মন দিয়ে শুনতেন এবং যতটা সম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতেন।

পুলিশ কর্মকর্তা মনজুর মোর্শেদ চৌধুরীর পাঁচ ছেলে, পাঁচ মেয়ের মধ্যে সবার বড় জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তাঁর ভাইবোনদের কেউ ঢাকায়, কেউ বিদেশে বসবাস করেন। ডা. জাফরুল্লাহর চাচাতো ভাইয়ের ছেলে ইলিয়াস চৌধুরী বাচ্চু বললেন, খুব বড় মনের মানুষ ছিলেন তাঁর চাচা। নিয়মিত আসতে না পারলেও আত্মীয়স্বজনের কোনো অনুষ্ঠান থাকলে অংশ নিতেন। এলাকায় এলেই মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনতেন। প্রতি বছর রমজানে ইফতার ও সেহরিসামগ্রী দিতেন এলাকার হাজারখানেক মানুষকে। এবার তিনি সেটা করতে পারলেন না। তাঁর মৃত্যুতে এলাকাবাসীর মনে অন্যরকম এক শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে খবর শুনে চোখের পানি ফেলছেন।

বাচ্চু ও তাঁর স্ত্রী আকতার জাহান জানালেন, ডা. জাফরুল্লাহর মৃত্যুর খবর শুনে এলাকার মানুষ তাদের কাছে ছুটে আসে। তারা মরদেহ একনজর দেখার আবদার করে। এ জন্য গ্রামের বাড়িতেও একটি জানাজর আয়োজন করা যায় কিনা, সেটা ভেবে দেখতে পরিবারের সদস্যদের কাছে খবর পৌঁছানো হয়েছে।

ডা. জাফরুল্লাহর আরেক ভাতিজা ইশতিয়াক চৌধুরী বলেন, তাঁর চাচা শুধু চিকিৎসক নন, সমাজসেবকও ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে এলাকাবাসী জনদরদি অভিভাবককে হারিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির লোকজন জানিয়েছে, এলাকার কোনো মানুষ জটিল রোগে আক্রান্ত হলে ডা. জাফরুল্লাহর কাছে যেতেন। তিনি কখনও বিরক্ত হতেন না। প্রয়োজনে ঢাকায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন।

আরও পড়ুন

×