কুষ্টিয়ার খোকসা
লোকসানের ভয়ে পেঁয়াজ তুলছেন না কৃষক

ফাইল ছবি
খোকসা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৩ | ০৫:১৬
খোকসায় পেঁয়াজের ফলন না পেয়ে লোকসান ঠেকাতে অনেক কৃষক জমি থেকে পেঁয়াজ না তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কৃষকের দাবি তাঁরা সরকারি প্রণোদনার বীজ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
চলতি রবি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার ৩৭৩ একর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহ করা ও কেনা নিম্নমানের পেঁয়াজবীজ দিয়ে আবাদ করে মারাত্মক ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়েন কৃষকরা। তাঁদের দাবি বিঘাপ্রতি গড়ে মাত্র ১০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে অতিরিক্ত খরচ ও লোকসান ঠেকাতে অনেক কৃষক পেঁয়াজ না তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এ ছাড়া নতুন পেঁয়াজে গাছ গজিয়ে যাওয়ায় মজুত রাখা যাচ্ছে না। তাই হাটবাজারে ভালো পেঁয়াজ ১ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। একদিকে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, অন্যদিকে ফলন ও দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তাঁরা।
পৌর এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ড মালিগ্রামের কৃষক ছাত্তার খান। নিজের ফার্মের একটি গরু বিক্রির ২ লাখ টাকা দিয়ে পাঁচ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে রবি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। লোকসান ঠেকাতে সরকারি প্রণোদনার বীজে রোপণ করা এক বিঘা জমির পেঁয়াজ না তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদের জন্য কৃষি অফিস থেকে ছাত্তার খানকে দুই কেজি হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজের দানা (বীজ) ও ২০ কেজি রাসায়নিক সার দিয়েছিল। মাঠে চারা রোপণের এক সপ্তাহ পর থেকে চারাগুলোয় মড়ক দেখা দেয়। প্রতিষেধক দিয়ে মড়ক থামলেও পেঁয়াজ ফলেনি।
এ গ্রামের কৃষক পোকন আলী, হুমায়ুন, আমজাদ আলী, আজাহার প্রামাণিক ও মোশারফ প্রামাণিক প্রণোদনার বীজ দিয়ে পৃথক পৃথক জমি আবাদ করেছিলেন। তাঁদের জমিতেও পেঁয়াজের ফলন হয়নি। কৃষকদের দাবি, এ বছর বাজার থেকে হাউব্রিড জাতের পেঁয়াজের দানা (বীজ) কিনে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকারিভাবে সরবরাহ করা প্রণোদনার বীজ নিয়ে এর চেয়েও বেশি প্রতারিত হয়েছেন। এতে অনেক কৃষককে পথে বসতে হবে।
কৃষক ছাত্তার খান বলেন, সরকারিভাবে সরবরাহ করা প্রণোদনার বীজ রবি মৌসুমে রোপণের উপযোগী নয়। এই বীজের জন্য তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকারি বীজে তিনি চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। এসব জমিতে গাছের সঙ্গে পেঁয়াজ না থাকায় তিনি এক বিঘা জমির পেঁয়াজ তুলবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বছর সব জমি মিলে ১৫ মণ পেঁয়াজ ফলাতে পারেননি। সামান্য যে পেঁয়াজ পেয়েছেন, তাও ঘরে রাখা যাচ্ছে না। জমি আবাদ করতে তাঁর ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তিনি বীজ সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।
উপজেলার সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফজলুল হক বলেন, আবহাওয়াজনিত কারণে কিছু জমিতে পেঁয়াজের ফলনে তারতম্য হয়েছে। প্রায় ১০০ জন কৃষক প্রণোদনার বীজ নিয়েছেন। সব কৃষক ক্ষতির শিকার হননি। এ বছর প্রতি বিঘায় প্রায় ৬০ মণ ফলন হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সবুজ কুমার সাহা জানান, এখন যে পেঁয়াজ তোলা হচ্ছে, সেটাকে হালি পেঁয়াজ বলে। এই পেঁয়াজের জন্য কৃষি বিভাগ প্রণোদনার বীজ দেয়নি। কৃষকরা সঠিক সময়ে বীজ বপন ও পরিচর্যা না করায় ফলনে বিপর্যয় হয়েছে।
- বিষয় :
- লোকসান
- পেঁয়াজ চাষ
- পেঁয়াজ চাষি
- খুলনা
- কুষ্টিয়া