ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ধানের ব্লাস্টে দুশ্চিন্তায় কৃষক

ধানের ব্লাস্টে দুশ্চিন্তায় কৃষক

ধান হাতে হতাশ কৃষক - সমকাল

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৫ মে ২০২৩ | ০৮:৫৫

মৌলভীবাজারে হাওরের বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু কৃষান-কৃষানির চোখেমুখে ফসল তোলার আনন্দের ঝিলিক নেই। ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়া ব্রি ২৮ ও ২৯ জাতের ধান তাদের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে। এ জাতের ধান বিঘাপ্রতি মাত্র দুই-তিন মণ ফলন হওয়ায় ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ছেন কৃষকরা।

রাজনগর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওরপাড়ের বাতাসে শুধু কৃষকদের হাহাকার ও দীর্ঘশ্বাস। এ অঞ্চলের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের কৃষক স্বরূপ দাস বলেন, ‘এক কিয়ার (৩০ শতাংশ) নিজের ও আড়াই কিয়ার বাগী (বর্গা) জমিনে (জমি) বোরো ধান ফলাইয়া ১০-১১ মণ ধান পাইছি। হারা (সারা) বছর বাল-বাইচ্ছা  (ছেলেমেয়ে) লইয়া কিতা খাইমু এই চিন্তায় রাইতে ঘুম আয় না। এর মাঝে কিস্তির টাকা লইয়া বোরো ক্ষেতে পানি ও সার দিছলাম। হেই কিস্তির টাকা কেমনে হুজমু  (শোধ) ইতা মনে হইলে ঘুম খানি হারাম হই যায়।’

একই গ্রামের বিধবা সাধনা দাস জানান, তাঁর ছেলেরা ৮ কিয়ার ব্রি ২৯ ধান আবাদ করে ২০-২২ মণ ধান পেয়েছে। ৭ কিয়ার জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ করায় কোনো মতো খেয়ে বাঁচার ব্যবস্থা হয়েছে। চিটা হওয়ায় ২৯ ধান পাইকাররাও কিনছেন না।  ব্রি-২৯ আবাদ করে যে ঋণগ্রস্ত হয়েছেন, সেই ঋণ কীভাবে শোধ দেবেন, সেই চিন্তায় রাতে তারা ঘুমাতে পারেন না।

একই এলাকার পরিতোষ দাস জানান, গত বছর তিনি দুই কিয়ার জমি আবাদ করে ৩৫ মণ ধান পেয়েছিলেন। ব্লাস্টের কারণে একই জমি আবাদ করে এ বছর মাত্র ৬-৭ মণ ধান পেয়েছেন।

এদিকে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের বড়কাপন, কচুয়া, রায়পুর, রছুলপুর, উলুইআইল এলাকার উঁচু জমিতে ফলানো ব্রি-২৮ জাতের ধানেও মাত্রাতিরিক্ত চিটা থাকায় কৃষকের কপাল পুড়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শামসউদ্দিন বলেন, জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বোরো আবাদ হয়েছে। ব্লাস্ট রোগে ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ১০০ হেক্টরের জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিঘ্ন ঘটবে না। তিনি জানান, এবছর জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৬০ হাজার ৫৭ হেক্টর।

এক প্রশ্নের জবাবে মো. শামসউদ্দিন বলেন, জ্বালানি তেলের দামের কারণে হারভেস্টার মেশিন মালিকরা কৃষকদের থেকে ধান কর্তন ও মাড়াইয়ে বিঘাপ্রতি ২ হাজার টাকা নিচ্ছে বলে তিনি জেনেছেন।  প্রান্তিক চাষিদের গ্রুপ গঠন করে সহজ শর্তে হারভেস্টার মেশিন দেওয়ার বিষয়টি ভেবে দেখার আশ্বাস দেন তিনি।

আরও পড়ুন

×