লিচুতে লোকসান, গতবারের তুলনায় বিক্রি অর্ধেক

বিপুল সরকার সানি, দিনাজপুর
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৩ | ১৮:০০
স্থানীয় চাষিরা জানান, রসালো ও মিষ্টি স্বাদ-গন্ধের কারণে দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা সারাদেশেই। আলাদা বৈশিষ্ট্যের কারণে এবার এই লিচু ফ্রান্সেও রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু রপ্তানিতে যে লাভ হয় তার হদিস পাননি কৃষক ও বাগানিরা। উল্টো কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে অনেকেই হতাশ।
দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল চায়না থ্রি জাতের লিচু। এই জাতের একটি লিচুর দামই উঠেছিল সর্বোচ্চ ২৬ টাকা। অথচ এবার একই জাতের একটি লিচুর সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য পাওয়া গেছে ১৪ টাকা। একইভাবে গত বছর বেদেনা জাতের একটি লিচুর সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ১৮ টাকা। এবার তা বিক্রি হয়েছে মাত্র ১১ টাকায়। মাদ্রাজি, বোম্বাই, কাঁঠালি জাতের লিচুর দামও গত বছরের তুলনায় ছিল অনেক কম।
উলিপুর এলাকার লিচু চাষি ফরিদুল ইসলাম বলেন, এখন লিচু শেষের পথে, তাই একটু দাম বেশি। তবে প্রথম দিকে যে দামে লিচু বিক্রি করেছি, তা ছিল অনেক কম। বছরজুড়ে লিচুর বাগান পরিচর্যা করতে হয়, ব্যয় করতে হয় অর্থ। সেই ব্যয় করা অর্থই অনেকে ওঠাতে পারেননি।
লিচু বিক্রি করতে আসা বিরল বাজার এলাকার রহিদুল ইসলাম বলেন, এবার বাজারে দাম নাই। খুব গরম আর রোদের কারণে লিচুতে দাগ পড়েছে। সে জন্য ব্যবসায়ীরা দাম ভালো বলছেন না। তাছাড়া এবার ঢাকায় নাকি লিচুর চাহিদা নেই। একেকটি বাগানের পেছনে যে খরচ হয়েছে, তাতে লোকসান হবে মনে হচ্ছে।
আড়তদার সিরাজুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়ার কারণে লিচুতে দাগ হয়ে গেছে। দাগ পড়া লিচু নিয়ে ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনছেন।
দিনাজপুর ফল আড়তদার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মিন্টু বলেন, এবারে ব্যবসা কম। এখানে গড়ে ২০ থেকে ৩০ ট্রাক ও ৬০০-৭০০ ভ্যান লিচু বেচাকেনা হয়েছে। গত বছর এই সংখ্যাটি ছিল অনেক বেশি। প্রতিদিন গড়ে ছিল ৮০-১০০ ট্রাক। ভ্যানে করেও বিক্রি হয়েছে হাজারেরও বেশি। এই বাজারটি গত বছর ছিল বড়মাঠে (গোর-এ শহীদ ময়দান)। খোলা জায়গা আর বড় জায়গা, ফলে ব্যবসা করে সুবিধা ছিল। ব্যবসায়ী ও ক্রেতারাও আসতেন। নিউ মার্কেটে জায়গা খুবই কম। যানজটের কারণে লিচু কিনতে আসতে পারেন না ক্রেতারা। ট্রাকে করে যে বাইরে লিচু পাঠাবে, সে জায়গাও নেই। যদি আগামী বছর বাজারটি কোনো খোলা জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়, তাহলে কৃষক ও বাগানিরা লাভবান হবেন।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান জানান, চলতি বছর জেলায় ৫ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১ হাজার ৭৯০ টন। এখনও লিচুর মৌসুম চলছে। মৌসুম শেষ হলে কত উৎপাদন আর বিক্রি হলো তা নিরূপণ করা হবে।
- বিষয় :
- লিচুতে লোকসান
- লিচু
- লিচু চাষ
- লিচু বিক্রি
- লোকসান