যাত্রী জিম্মি করে বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া বাস টার্মিনালে যাত্রীর ভিড়। শুক্রবার সকালে তোলা ছবি - সমকাল
নিরঞ্জন সূত্রধর, শিবালয় (মানিকগঞ্জ)
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০
ঢাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আমিনুল ইসলামের বাড়ি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায়। ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার জন্য ফেরি পার হয়ে গতকাল শুক্রবার মানিকগঞ্জের আরিচা পৌঁছান। হাজারো যাত্রীর ভিড় ঠেলে সেলফি পরিবহনের বাসে উঠতে পারেন। আরিচা বাসস্ট্যান্ড থেকে সাভার পর্যন্ত তাঁকে ভাড়া গুনতে হয় ৩৫০ টাকা। আমিনুলের ভাষ্য, স্বাভাবিক সময়ে এই পথের ভাড়া ১৫০ টাকা। তাঁকে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া দিতে হয় এদিন। একই রকম অভিযোগ করেন সহযাত্রী শহিদুল ইসলাম ও সুমন কাজী।
যাত্রীদের ভাষ্য, কর্মস্থলগামী মানুষের চাপকে নির্ধারিত ভাড়া আদায়ের সুযোগ হিসেবে দেখছেন অসাধু বাস মালিক ও শ্রমিকরা। তারা অসহায় মানুষকে জিম্মি করে দ্বিগুণ-তিন গুণ ভাড়া আদায় করছেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বেশ কয়েকজন যাত্রী। তাদের অভিযোগ, পুলিশের সামনেই বাড়তি ভাড়া আদায় হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট ঘুরে জানা যায়, সকাল থেকেই রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া প্রান্ত ও পাবনার কাজীরহাট প্রান্ত থেকে ফেরি ও লঞ্চে করে আসছেন যাত্রীরা। তারা গাদাগাদি করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা ও যমুনা নদী পাড়ি দিচ্ছেন। তাদের বেশিরভাগই ঢাকার সাভার, নবীনগর, গাজীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত। শনিবার তাদের প্রতিষ্ঠান খোলা।
নবীনগর যাওয়ার জন্য পাটুরিয়া ঘাটে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন কুষ্টিয়া থেকে আসা রেপালী আক্তার, জুলেখা খাতুন, লিলি আক্তার ও জয়নাল খান। তারা বলেন, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঘাটে পৌঁছান। কিন্তু পর্যাপ্ত বাস নেই।
পাবনা থেকে আরিচা ঘাটে আসেন পোশাককর্মী খলিলুর রহমান, সাথী আক্তার ও মনিকা খাতুন। তারা জানান, শনিবার তাদের কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে। দুপুর ১২টার দিকে ঘাটে এসে দুই ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করছেন।
ওই যাত্রীরা জানান, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দুই-তিন গুণ ভাড়া দাবি করছেন বাসের চালক-সহকারীরা। তাই কর্মস্থলে সঠিক সময়ে যাওয়া নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন এই কর্মজীবী মানুষ।
দুপুরে পাটুরিয়া ঘাটে দেখা যায়, বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ। ফলে এখান থেকে বাসে উঠতে চালক ও সহকারীদের সঙ্গে যাত্রীরা ভাড়া নিয়ে দরকষাকষি করছেন। জানা গেছে, পাটুরিয়া থেকে সেলফি পরিবহনের বাসে ঢাকা পর্যন্ত নির্ধারিত ভাড়া ১৮৮ টাকা। তবে যাত্রীদের কাছ থেকে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা রাখা হচ্ছে। একই রকম ভাড়া আদায় চলছে নীলাচল, পদ্মা লাইন, যাত্রীসেবা, জনসেবা, শুভযাত্রা, ডি-লিংক, বিআরটিসি দোতলা, লাক্সারিসহ অন্যান্য পরিবহনের বাসেও। পাশেই পুলিশ সদস্যরা কর্মরত থাকলেও তাদের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায়নি।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেন কয়েকজন চালক। তাদের দাবি, যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। এ কারণে ‘কিছু টাকা’ বেশি নেওয়া হচ্ছে।
পাটুরিয়ার সেলফি পরিবহন মালিক সমিতির সুলতান আহম্মেদের ব্যাখ্যা, পাটুরিয়া থেকে যাত্রীবোঝাই করে ঢাকায় গেলেও আসার সময় খালি বাস নিয়ে আসতে হয়। এ কারণে চালকরা কিছু টাকা বেশি নিচ্ছেন। একই দাবি করেন নীলাচল বাস মালিক সমিতির জসিম উদ্দিনও।
শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহনুর এ আলম বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে কোনো যাত্রীর কাছ থেকে অভিযোগ পাননি। পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- বিষয় :
- বাড়তি ভাড়া
- শিবালয়