ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

তালিকায় নাম নেই, তবু তিনি ‌‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’

তালিকায় নাম নেই, তবু তিনি ‌‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’

ফাইল ছবি

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩ | ০৩:০৭

বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে ছেলের জন্য চাকরি বাগানো, জমি দখল, মিথ্যা মামলাসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া গেছে আবদুল খালেক মজলিশ নামে এক ব্যক্তি বিরুদ্ধে। খালেক মজলিশ সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দামারপোতা গ্রামের মৃত পরশউল্লাহ মজলিশের ছেলে। জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো তালিকা এবং গেজেটে তাঁর নাম নেই। অথচ তিনি সব খানে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন।

মুক্তিযোদ্ধা সনদ জাল করে প্রতারণার অভিযোগে খালেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ১৩ জুন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শাখার ডেপুটি কমান্ডার সফিক আহমদ। মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ দিয়ে খালেকের ছেলের চাকরি গ্রহণের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

আবেদনে সফিক আহমদ উল্লেখ করেন, আবদুল খালেক মজলিশের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো তালিকায় নেই। সর্বশেষ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যে সমন্বিত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানেও তাঁর নাম ছিল না। অথচ খালেকের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় ব্যবহার করে তাঁর ছেলে তৌহিদুজ্জামান মজলিশ চাকরি নিয়েছে। তাঁর অপর চার ছেলেও নিজেদের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয়ে জমি দখল থেকে শুরু করে নানা অপকর্ম করে চলেছে। বিভিন্ন ব্যক্তির নামে মিথ্যা মামলা করেও হয়রানি করছে তারা। তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এমনকি ২০১৩-১৪ সালে সাতক্ষীরায় হওয়া সহিংসতায় খালেকের পরিবারের যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

সরকারি গেজেটসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো তালিকায় নাম না থাকা প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হয় আবদুল খালেক মজলিশের সঙ্গে। তিনি দাবি করেন, তাঁর ঢাকায় জায়গামতো কথা হয়েছে। সব কাগজপত্র ঠিক করে তারা পাঠিয়ে দেবে। মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ে এবার তাঁর নাম আছে বলে তিনি দাবি করেন।

কোথায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন– এমন প্রশ্নের জবাবে খালেক মজলিশ বলেন, দক্ষিণে। কোথায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সে প্রশ্নের জবাবেও বলেন, দক্ষিণে। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে খালেক বলেন, তাঁর অনেক জায়গাজমি আছে। তাই তিনি ভাতা নেন না। জানা গেছে, খালেক মজলিশের ছেলে তৌহিদুজ্জামান মজলিশ বর্তমানে খুলনার পাইকগাছা ইউনিয়ন পরিষদে উন্নয়নকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তৌহিদুজ্জামান মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়েছেন কিনা– এ প্রসঙ্গে বাবা খালেক বলেন, সে পরীক্ষা দিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়েছে কিনা, আমি জানি না। এ বিষয়ে খালেক মজলিশের পরিবারের অন্য সদস্যরাও কথা বলতে রাজি হননি।  

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মশিউর রহমান বলেন, ‘খালেক মজলিশ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ তো করেইনি বরং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। এ ধরনের ব্যক্তির মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে যে কাগজপত্র করছে, তা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানজনক। সে কোথাও তালিকাভুক্তও হতে পারবে না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, খালেক মজলিশের বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সদর উপজেলা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার সফিক আহমদ তাঁর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটি সদর উপজেলার ইউএনওর কাছে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে খালেক মজলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×