ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

চার দিনমজুরের সততা

তাঁরা অন্যের টাকা নেন না

তাঁরা অন্যের টাকা নেন না

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০

কবরস্থানের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করছিলেন চার শ্রমিক। এ সময় একটি টাকার বান্ডিল সেখানে পড়ে থাকতে দেখেন তারা। পরে বিষয়টি কবরস্থান পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে জানান চার শ্রমিক। টাকা পাওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার উল্লাপাড়ার বাহিমান গ্রামে। পরে প্রকৃত মালিককে বান্ডিলে থাকা ৯৬ হাজার টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। চার শ্রমিকের এমন দৃষ্টান্তে অবাক হয়েছেন টাকার মালিক।

বাহিমান কবরস্থানের সভাপতি শাহাদত হোসেন জানান, কবরস্থানের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করার জন্য মঙ্গলবার সকালে কাজ শুরু করেন গ্রামের চার শ্রমিক– শহিদুল ইসলাম, আশরাফুল আলম, আব্দুল হালিম ও ওয়ারেছ আলী। ওই দিন দুপুরে টাকা কুড়িয়ে পাওয়ার বিষয়টি তাঁকে জানান শ্রমিকরা। কোরবানির ঈদের আগে জনতার হাটে এক ব্যবসায়ীর কিছু টাকা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনি জানতেন। এ কারণে টাকা পাওয়ার বিষয়টি বাজারের ইজারাদারকে জানান তিনি। বুধবার তারাই প্রকৃত মালিককে টাকা বুঝিয়ে দেন।  

হাটের ইজারাদারদের একজন আব্দুস সালাম জানান, গত ২৪ জুন ঈদের আগে জনতার হাটে গরু বিক্রি করতে আসেন পার্শ্ববর্তী বেতকান্দি গ্রামের গরু ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ফকির। তিনি ওই দিন কয়েকটি গরু বিক্রির জন্য হাটে আনেন। একটি গরু ৯৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেন মিজানুর। ওই টাকা কোমরে লুঙ্গির ভাঁজে রেখে হাটের পাশে অবস্থিত বাহিমান কবরস্থানের দেয়ালের ওপর বসে ছিলেন। পরে দেয়াল থেকে নেমে হাটে ঢুকে যান তিনি। টাকাগুলো তাঁর অজান্তে কবরস্থানের ভেতরে জঙ্গলের মধ্যে পড়ে যায়। মিজানুর রহমান তাঁর টাকা হারানোর বিষয়টি ওই দিনই হাটের ইজারাদারদের অন্যতম আশরাফুল ইসলামকে জানান।

গতকাল বুধবার হারানো টাকার মালিক মিজানুর রহমান ফকিরকে অবহিত করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের সঙ্গে কুড়িয়ে পাওয়া নোটগুলোর বিবরণ মিলে যায়। হাটের ইজারাদার আশরাফুল ইসলাম, আব্দুস সালাম, শিক্ষক হাবিবুল ইসলাম ও অন্যরা মিলে মিজানুরের হাতে ৯৬ হাজার টাকা তুলে দেন। এ সময় মিজানুর খুশি হয়ে চার দিনমজুরকে ১৭ হাজার টাকা ও কবরস্থানের উন্নয়নে ৫ হাজার টাকা দেন।

এত দিন পরে টাকা পেয়ে বিস্মিত হয়েছেন মিজানুর রহমান ফকির। তিনি বলেন, ‘হারানো টাকা ফিরে পাব, এমন আশা ছিল না আমার। এখনও সৎমানুষ দেশে আছে, এটা আবারও প্রমাণিত হলো।’

এত টাকা পেয়ে কেন তা ফিরিয়ে দিয়েছেন জানতে চাইলে দিনমজুর শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, দিনমজুরি করে খাই। অন্যের টাকা নেব কেন? টাকা পাওয়ার পর চারজন পরামর্শ করে টাকার বান্ডিলটা কবরস্থানের সভাপতি শাহাদত হোসেন সাহেবের কাছে জমা দিয়েছি।’

আরও পড়ুন

×