ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বর্জ্যে মরছে নদী

বর্জ্যে মরছে নদী

ফরিদগঞ্জ-কেরোয়া সেতুর নিচে ডুমুরিয়ার শাখা নদীতে আবর্জনা - সমকাল

চাঁদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৩ | ০৫:০০ | আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৩ | ০৫:০০

সেচ প্রকল্পের বাঁধের কারণে এমনিতেই নাব্য হারিয়েছে ডাকাতিয়া নদী। এর মধ্যে ফরিদগঞ্জ-কেরোয়া সেতুর নিচে ও দুই প্রান্তে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। কেরোয়া সেতু ব্যবহার করে নদীর দুই তীর থেকে প্রায় অর্ধেক অংশ ভরাট করা হয়েছে।

ফরিদগঞ্জ বাজারের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্ব-দক্ষিণ দিকে ডাকাতিয়া নদীর শাখা প্রবাহিত। বাজারের কাছে নদীর ওপর নির্মিত কেরোয়া সেতু। এর নিচে দুই তীরে ফেলা হচ্ছে বাজারের ময়লা-আবর্জনা। এতে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। সেতু ও এর দুই প্রান্তে দাঁড়ালে নিচে শুধু আবর্জনা দেখা যায়। পানির দেখা মেলে না। প্রায় দুই বছর ধরে অবৈধভাবে নদী ভরাটের কাজটি চলছে। প্রত্যুষে এবং গভীর রাতে সেতুর নিচে ময়লা ফেলা হচ্ছে।

জানা গেছে, সেতুটির পশ্চিম-উত্তর কোণে ডাকবাংলোর কাছে ১৯৮৯ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্যের নির্দেশে মাছ চাষের উদ্দেশ্যে নদীর দুই তীরে মাটি ফেলে বাঁধ দেওয়া হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে বদ্ধ জলাশয় উল্লেখ করে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করা হয়। এতে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় মৎস্যজীবীদের জীবিকার পথ। আন্দোলনে নামে ফরিদগঞ্জ মৎস্যজীবী সংগ্রাম পরিষদ। উপজেলা, জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন তারা। তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুন নূরের নির্দেশে অভিযোগের তদন্ত করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনির চৌধুরী। তদন্তে প্রমাণিত হয় জলাশয়টি উন্মুক্ত। পরে ইজারা বাতিলের সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর ১৯৯৭ সালে সরেজমিন তদন্ত করেন তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার। তাঁর সুপারিশে বাতিল হয় ডাকাতিয়ার শাখা ও ওই উন্মুক্ত জলাশয়ের ইজারা।

স্থানীয়রা বলছেন, গত বোরো মৌসুমে ফরিদগঞ্জের উত্তরাঞ্চলে সেচ পানির অভাবে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে যায়। পরে প্রশাসনের নির্দেশে সিআইপির জলকপাট দিয়ে পানি প্রবাহ বাড়িয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা রয়েই গেছে।

ফরিদগঞ্জ ইউএনওর দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুন্নাহার বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। নদীতে বর্জ্য ফেলা, বাঁধ দেওয়া, দখল করা বা চেষ্টা করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হান্নানের ভাষ্য, গত ঈদের আগে এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন তারা। বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ এবং নদী ভরাটের বিষয়টি নজরে এসেছে তাদের। বর্জ্য অপসারণসহ পানি প্রবাহ সচল রাখতে ফরিদগঞ্জ পৌর মেয়রকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কারণ নদীর এ বর্জ্য অপসারণে পৌরসভার দায়িত্ব বেশি। কিন্তু এখনও বর্জ্য অপসারণ করেনি তারা। বিষয়টি জেলা নদীরক্ষা কমিটির আগামী সভায় তোলা হবে।

পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে কিনা জানা নেই। নদীতে বর্জ্য ফেলতে নিষেধ করা হয়েছে। বর্জ্য অপসারণের বিষয়ে যদি পৌরসভার কিছু করার থাকে, সেটা করা হবে।

আরও পড়ুন

×