ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বাগেরহাট ও স্বরূপকাঠি

বাঁধ ভেঙে তিন গ্রাম প্লাবিত

বাঁধ ভেঙে তিন গ্রাম প্লাবিত

বাগেরহাটে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাওয়া একটি গ্রাম সমকাল

বাগেরহাট ও স্বরূপকাঠি (পিরোজপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০

 বাগেরহাট সদর উপজেলায় ভৈরব নদের বাঁধ ভেঙে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এ ছাড়া জোয়ারের পানিতে আরও সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে।

 শুক্রবার দুপুরের জোয়ারে পানির চাপে ভদ্রপাড়া এলাকায় গ্রাম রক্ষা বাঁধটি ভেঙে যায়। মুহূর্তেই প্লাবিত হয় ভদ্রপাড়া, বৈটপুর ও বেমরতা গ্রামের বেশিরভাগ এলাকা। ২০ থেকে ২৫টি ঘের ও বেশ কিছু পুকুর তলিয়ে ভেসে গেছে মাছ। তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকের রান্না ঘরে পানি উঠেছে। খাবারের ব্যবস্থা করতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাদের। এ অবস্থায় দ্রুত বাঁধ সংস্কার করার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

ভদ্রপাড়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি ঘের মালিক মশিউর রহমান বাদশা জানান, দুপুরে জোয়ারের পানির চাপে গ্রাম রক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢোকে। তার তিনটি মাছের ঘের ডুবে প্রায় ৫ লাখ টাকার মাছ বের হয়ে গেছে।

একই এলাকার বৃদ্ধা হায়াতুন্নেছা বেগম বলেন, নদীর পানি ঠেকাতে বেড়িবাঁধ নেই। এলাকাবাসী মিলে ছোট বাঁধ দিয়ে কোনোমতে বসবাস করছি। সেটিও ভেসে গেল। জোয়ারের পানি ঘরের ভেতর ঢুকেছে। বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। আমাদের দুর্ভোগ কোনোভাবেই কমছে না।

ভদ্রপাড়া, বৈটপুর ও বেমরতা ছাড়াও সদর উপজেলার হাড়িখালি, মাঝিডাঙ্গা, মোরেলগঞ্জ উপজেলার ঘষিয়াখালী, বহরবুনিয়া, সানকিভাঙ্গা, খাওলিয়া, গাবতলা, মোংলার জয়মনির ঘোলসহ বেশ কিছু এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, দড়াটানা ও ভৈরব নদের পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন নদী ও খালের পানিও বেড়েছে। যেসব এলাকায় বেড়িবাঁধ নেই, সেসব এলাকার নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার খবর পেয়েছি। পানি কমে গেলে প্লাবিত হওয়া এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে রিং বেড়িবাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।

এদিকে পিরোজপুরের কাউখালীতে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে সদর উপজেলার কুমিয়ান ও কচুয়াকাঠি গ্রামের ১৫০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি উঠেছে কাউখালী আদর্শ বিদ্যালয় ও কাজী হারুন অর রশিদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

কাজী হারুন অর রশিদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, প্রতি বছরই বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি বিদ্যালয়ে ঢোকে। অনেক সময় পড়ে গিয়ে বই খাতা পোশাক ভিজে যায়। দুর্ভোগ এড়াতে এ সময়টায় শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে ছুটি দিয়ে দেন।

এলাকার বাসিন্দা আব্দুল বারেক জানান, বছরের চারটি মাস এলাকার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করে। দুর্ভোগ নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন নিবেদন করেও কাজ হয়নি। পরে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে একটি নালা তৈরি করা হয়। অপরিকল্পিত এ নালায় উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয়েছে। কাজী হারুন অর রশিদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বীথিকা সাহা জানান, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয়ে হাঁটু সমান পানি জমে। বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও কোনো কাজ হয়নি।

কাউখালী আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মানর হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে পানির সঙ্গে ময়লা জমে দুর্গন্ধ ছড়ায়। মশা মাছির কারণে টেকা দায়। কাউখালী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জলাবদ্ধতার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

×