ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

আমবাগানে আদা চাষ নিয়ে নতুন স্বপ্ন

আমবাগানে আদা চাষ নিয়ে নতুন স্বপ্ন

ছবি: সমকাল

পুঠিয়া (রাজশাহী) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০

সম্প্রতি অনার্স শেষ হয়েছে দুই বন্ধু আশিক উজ্জামান ও মেজবাউল হাসানের। পড়াশোনা শেষ করে আধুনিক চাষাবাদে কিছু যুক্ত করা যায় কিনা, সে বিষয়ে তারা চিন্তাভাবনা করছিলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আমবাগানের প্রায় দুই বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে বস্তায় আদা রোপণ করেন তারা। গাছ ভালো হয়েছে, পরিচর্যাও করছেন। তাদের আশা, ভালো ফলন হবে।

 আশিক ও মেজবাউলের বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়নের বিড়ালদহ এলাকায়। সেখানেই আমবাগানে গাছের ছায়ায় প্রায় তিন হাজার বস্তায় আদা চাষ করছেন। আশিক বলেন, আমবাগানে বাণিজিকভাবে আদার চাষ এটিই প্রথম। এ কারণে বিভিন্ন এলাকার বাগান মালিকরা দেখতে আসছেন। তারা বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন।

আদার চাষ দেখতে আসা বাগান মালিক সাইদুর রহমান বলেন, আমগাছ বড় হয়ে গেলে জমি ছায়াযুক্ত থাকে। লাঙল দিয়ে জমি চাষ করায়ও ঝমেলা হয়। এ কারণে অনেকেই জমি ফেলে রাখেন। ফলে আম ছাড়া আর কোনো ফসল উৎপাদন হয় না। তবে দুই বন্ধু অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই বন্ধুর এ উদ্যোগ আমচাষিদের দ্বিগুণ আয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এলাকায় আমবাগান অনেক বেশি। এ জমিতে পরিকল্পিতভাবে আদার চাষ করা সম্ভব। এতে দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ও বিশেষ প্রকল্পের উদ্যোগ নিচ্ছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শামসুল ওয়াদুদ বলেন, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর কৃষকরা উঁচু জমিতে আমবাগান করেন। আমগাছ ছাড়া জমি পরিত্যক্ত থাকে। সবসময় ছায়া থাকায় কোনো ফসল উৎপাদন হয় না। আধুনিক প্রযুক্তিতে আদা চাষাবাদ করতে পারলে মালিক লাভবান হবেন।

উদ্যোক্তা দুই বন্ধুর অপরজন মেজবাউল হাসান জানান, তাদের তিন হাজার বস্তায় আদা রোপণে খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। তারা আশা করছেন, এ উদ্যোগের মধ্যে সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় হবে।

আদা চাষে উঁচু ও ছায়াযুক্ত স্থান উপযুক্ত। সে হিসাবে আমবাগান উপযুক্ত স্থান। শুরুতেই বস্তায় জৈব সার মিশ্রিত মাটি ভরাট করে সারিবদ্ধভাবে রাখতে হবে। এরপর বস্তায় বীজ আদা রোপণ করতে হয়। পরিমিত সেচ ও সঠিক সময়ে নিয়মানুসারে পরিচর্যা করলে ভালো ফলন হবে বলে মন্তব্য করেন উপজেলার সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খ ম জামাল উদ্দীন।

পুঠিয়ায় নতুন ও পুরোনো মিলে প্রায় ৯০০ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার। তাঁর ভাষ্য, বাগানে জলাবদ্ধতার শঙ্কা নেই। প্রতি একরে বস্তায় আদা চাষ করতে খরচ হবে প্রায় দেড় লাখ টাকা। একরপ্রতি চার থেকে পাঁচ টন আদা উৎপাদন সম্ভব। গত রোববার আদা চাষের স্থান ঘুরে দেখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রবিন্দ্রশ্রী বড়ুয়া। তিনি বলেন, আমবাগানের জমিতে আধুনিক প্রযুক্তি ও পরিকল্পিতভাবে আদার চাষ যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

আরও পড়ুন

×