ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বিচার চান জিনিয়ার মা, শিক্ষকদের আলটিমেটাম

বিচার চান জিনিয়ার মা, শিক্ষকদের আলটিমেটাম

মেয়ে হত্যার বিচার চাইতে বিদ্যালয়ে জিনিয়ার মা। বুধবার সকালে সুলতানপুর মাহতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে তোলা। ছবি: সমকাল

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৩ | ১৫:৫৪ | আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২৩ | ১৫:৫৫

কুমারখালীতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক অপমান করায় ছাত্রীর আত্মহত্যা ও এ ঘটনার জেরে প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বুধবার এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, গত সোমবার দুপুরে উপজেলার কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর মাহাতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাদে ধূমপান করার অভিযোগে এক শিক্ষক পাঁচ ছাত্রীকে কক্ষে ডেকে নিয়ে ভিডিও ধারণ করেন। আরেক শিক্ষক ছাত্রীদের ব্যাগ কেড়ে নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে এসব ছবি অভিভাবকদের মধ্যে ও অনলাইনে ছড়ানোর হুমকি দেন বলে অভিযোগ ওঠে।

পরে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরে এ অপমান সহ্য করতে না পেরে স্কুলের পোশাক পরেই সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী জিনিয়া খাতুন (১৪) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। অন্যদিকে মঙ্গলবার দুপুরে নিহত ছাত্রীর জানাজায় গিয়ে গণপিটুনি ও হামলার শিকার হন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ।

উভয় ঘটনায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেন নিহতের স্বজন ও শিক্ষকরা। স্বজনরা অভিযুক্তদের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিদ্যালয়ে যান। অন্যদিকে শিক্ষকরা হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ সভা করেন। বুধবার সকাল ১১টার দিকে সুলতানপুর মাহাতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নিহত ছাত্রীর মা, মামি, ছাত্রীদের একাংশসহ অর্ধশতাধিক নারী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিদ্যালয় চত্বরে ঢোকেন। বিক্ষোভকারীদের হাতে ‘জিনিয়া হত্যার বিচার চাই’, ‘আমাদের মেয়ে মরল কেন? বিচার চাই’ লেখা ফেস্টুন ছিল। এ সময় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সান্ত্বনা দিয়ে ফিরিয়ে দেয়।

নিহত ছাত্রীর মা শান্তা খাতুন বলেন, শিক্ষকরা আমার মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছেন। আমি বিদ্যালয়ে মেয়ে হত্যার বিচার চাইতে এসেছি। বিচার পেতে থানায় মামলা করব।

মামি মমতাজ খাতুন বলেন, আমাদের মেয়ে সিগারেট খায়নি। তবুও তাকে স্যাররা দুই ঘণ্টা রুমে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছেন। স্যারের পা ধরেও বাঁচতে পারল না জিনিয়া। আমি দোষীদের শাস্তি চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী জানায়, সে ঘটনাস্থলে ছিল। সে ও তার বান্ধবী জিনিয়া সিগারেট খায়নি। লাল্টু স্যার বারবার জিনিয়াকে বলছিলেন, ‘তোর ঠোঁট কালো, তুই সিগারেট খাইছিস, তোকে নায়িকা বানাব, বিড়ি খাওয়া ছবি অনলাইনে ছেড়ে দেব।’ আর ওলিউর স্যার ভিডিও করেছেন।

অন্যদিকে প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের শাস্তি চেয়ে বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শিক্ষকরা। সমাবেশের আয়োজন করে জেলা শিক্ষক সমিতি। ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম স্বপনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন জেলা শিক্ষক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রুহুল আমীন, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান, অতিরিক্ত সদস্য আব্দুর রহিমসহ প্রমুখ।

সভায় বক্তারা বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে সন্তানের মতো। জিনিয়ার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত, মর্মাহত। কিন্তু শিক্ষকের ওপর হামলা করা অতি নিন্দনীয় ও ন্যক্কারজনক কাজ। স্থানীয়দের উস্কানিতে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় জিনিয়ার পরিবারের কেউ জড়িত নেই। যারা জড়িত, তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনা না হলে কঠোর আন্দোলন, সংগ্রাম ও কর্মসূচির হুমকি দেন তারা। 

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম স্বপন বলেন, আত্মহত্যার ঘটনায় আমি মর্মাহত। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। তাঁর ভাষ্য– আত্মহত্যার ঘটনায় কোনো শিক্ষক জড়িত থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, গত সোমবার দুপুরে বিদ্যালয়ের ছাদে উঠে পাঁচ ছাত্রী ধূমপান করে। বিষয়টি জানতে পেরে বিদ্যালয়ের আয়া শিউলি খাতুন দেখে শিক্ষকদের জানান। পরে সহকারী শিক্ষক মশিউর রহমান লাল্টু ও মো. ওলিউর রহমান তাদের ডেকে এনে ভিডিও ধারণ করেন এবং অভিভাবকদের জানানো, অনলাইনে ছড়ানো ও টিসি দেওয়ার হুমকি দেন। এরপর বিদ্যালয় ছুটি শেষে দুই ছাত্রী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। স্থানীয়রা তাদের জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও বিকেলে জিনিয়া আত্মহত্যা করে। সে সুলতানপুর গ্রামের জিল্লুর রহমানের মেয়ে।


আরও পড়ুন

×