বস্তায় আদা চাষে বাজিমাত

নওগাঁ সংবাদদাতা
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৬:১০ | আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৬:১০
পত্নীতলা উপজেলার পাটিআমলাই গ্রামের কৃষক নারগিছ বেগম ও রুহুল আমিন দম্পতি বস্তায় আদা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। কৃষি অফিসের পরামর্শে তারা ১৩ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন, যা রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
কৃষক নারগিছ বেগম জানান, এ পদ্ধতিতে প্রতি বস্তায় ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম আদা হবে। সেই হিসাবে ১৩ হাজার বস্তায় আদা হবে ৭ টন, যার বর্তমান বাজারদর ১৫ লাখ টাকা। ৫ লাখ টাকা খরচ বাদ দিলেও ১০ লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন এ দম্পতি। লাভজনক হওয়ায় আগামী বছর আরও বেশি বস্তায় আদা চাষ করবেন বলে জানান তারা।
নারগিছ বেগম ও রুহুল আমিন দম্পতির পাশাপাশি পত্নীতলা ইউনিয়নের খালেকুজ্জামান ৩০০ বস্তা, পাটিচোরা ইউনিয়নের আবুল হোসেন ২০০ এবং পলাশ চন্দ্র ১৫০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। তাদের মতো অনেক কৃষক পরিত্যক্ত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ শুরু করেছেন। ভালো ফলন হওয়ায় আগামীতে এ পদ্ধতির চাষাবাদ ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করছেন তারা।
চাষ পদ্ধতি : প্রথমে সিমেন্ট বা আলুর একটি বস্তায় ৩ ঝুড়ি মাটি, ১ ঝুড়ি বালু, ১ ঝুড়ি গোবর সার ও ২৫ গ্রাম দানাদার কীটনাশক নিতে হবে। এগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে একটি বালুভর্তি টবে রাখতে হবে। পরে তিন টুকরো অঙ্কুরিত আদা পুঁতে দিতে হবে। আদার কন্দ লাগানোর আগে ২ গ্রাম ছত্রাকনাশক এক লিটার পানিতে দিয়ে শোধন করে নিতে হবে। শোধনের পর কন্দগুলো আধা ঘণ্টা ছায়ায় রেখে শুকিয়ে নিতে হবে। ২০ থেকে ২৫ দিন পর চারা বের হলে সাবধানে তুলে বস্তার মুখে তিন জায়গায় বসিয়ে দিতে হবে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আদাগাছ বড় হয়ে যাবে।
কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় এবার ৫০ থেকে ৬০ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। বস্তায় আদা চাষে মাটিবাহিত রোগের সংক্রমণ কম হয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। বাড়ির উঠান, প্রাচীরের কোল ঘেঁষে বা আশপাশের ফাঁকা জায়গা অথবা ছাদে যেখানে খুশি রাখা যায়। এ কারণে এ পদ্ধতি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বস্তায় আদা চাষ করলে অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না। একবার ফসল তোলার পর সেখানে আলাদা করে কোনো সার ছাড়াই আরেকটি ফসল ফলানো যায়। ফলে খরচ একেবারেই কম।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, আদা আমদানি করতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তার ৩ শতাংশ কৃষকের প্রশিক্ষণে ব্যয় করলে আদার উৎপাদন তিন থেকে চার গুণ বাড়ানো সম্ভব। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশে আদার চাহিদা পূরণ করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।