ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

‘ভেতরে ঢুকলে গায়ে পলেস্তারা খসে পড়ে’

‘ভেতরে ঢুকলে গায়ে পলেস্তারা খসে পড়ে’

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ২৩:৪৫

বাগেরহাটে অন্তত ২৭টি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে। ফলে সেবা নিতে এসে ভয়ে ভয়ে থাকেন হাজারো মানুষ। বিভিন্ন সময় দাবি জানালেও প্রতিকার না মেলায় বাধ্য হয়ে এসব ভবনেই সেবা দিতে হচ্ছে বলে জানান জনপ্রতিনিধিরা।

সরেজমিন দেখা যায়, মোরেলগঞ্জের প্রত্যন্ত তেলিগাতী ইউনিয়দ পরিষদের ভবনটি কোনো রকমে টিকে আছে। বিভিন্ন স্থান থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। বৃষ্টি হলেই ছাদ চুয়ে পানিতে ভিজে যায় আসবাব ও কাগজপত্র। পরিষদে যেতে ভয় পায় সাধারণ মানুষ, কখন যে ছাদ ভেঙে পড়ে!

কচুয়া উপজেলার বাধাল ইউনিয়ন পরিষদের একই অবস্থা। নাগরিক সেবা নিতে এ পরিষদে সকাল থেকে ভিড় লেগে যায়। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এখানেও ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

শুধু তেলিগাতী বা বাধাল ইউনিয়ন পরিষদ নয়; জেলার রায়েন্দা, ষাটগম্বুজ, কাড়াপাড়া, বলইবুনিয়া, গাংনী, কলাতলা, রামচন্দ্রপুর, বড়বাড়িয়াসহ ২৭টি পরিষদের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অন্তত ৯টি পরিষদ ভবন। এসব পরিষদে বিভিন্ন সময় কাজে আসে প্রায় ৫ লাখ মানুষ।

গত সোমবার বাধাল ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, দুই শতাধিক মানুষ মাঠ, রাস্তা, চায়ের দোকান ও গাছের নিচে অপেক্ষা করছে। এ সময় কথা হয় গাছের নিচে বসে থাকা ষাটোর্ধ্ব মোতালেব মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মানুষের ভিড়ে কোথায় বসব? ভবনে জায়গা নেই; পরিত্যক্ত ভবনের ভেতরে যাব, তারও কায়দা নেই। ভবন মনে হয় কখন ভেঙে পড়ে! ভাতা নিতে এসে জীবনের ঝুঁকিতে আছি।’

অপর এক সেবাগ্রহীতা সাদিয়া মীম বলেন, টিসিবির কার্ড নিয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। পরিষদের পুরাতন ভবন ভেঙে পড়ছে। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে।

তেলিগাতী ইউপিতে আসা শফিউল শেখ নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘নাতির জন্মনিবন্ধন করাতে এসেছি। ভেতরে ঢুকলে গায়ে পলেস্তারা খসে পড়েছে। যতবার কাজে আসি, ততবার একই ভোগান্তিতে পড়ি।’

পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিতে বিড়ম্বনার কথা স্বীকার করে তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোর্শেদা আকতার বলেন, পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ ভবন যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

বাধাল ইউপি চেয়ারম্যান নকীব ফয়সাল অহিদ বলেন, মানুষ আসছে বয়স্ক, বিধবা বা প্রতিবন্ধী ভাতা; টিসিবির পণ্য নিতে। এ ছাড়া জন্মনিবন্ধনসহ অন্যান্য নাগরিক সেবা নিতে আসা মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বাধ্য হয়ে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। আশপাশে কোনো ভবনও নেই, যে ভাড়া নেওয়া যাবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুজ্জামান জানান, জেলায় ৭৫টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এখনও ২৭টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ভবনের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

×