কুয়াকাটা-বরিশাল সড়ক
‘সড়ক যেন ছোট্ট ছোট্ট ডোবা’

কুয়াকাটা-বরিশাল সড়কের কলাপাড়া উপজেলার পাখিমারা বাজার এলাকার খানাখন্দ। ছবি-সমকাল
পটুয়াখালী, কলাপাড়া ও কুয়াকাটা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১২:১১
‘রাস্তা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আর কুয়াকাটায় আইব না। ১১ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে কুয়াকাটায় আসার স্বাদ মিটে গেছে। মাত্র ২০ মিনিটের পথ আসতে ঘণ্টা পার হয়েছে এবং শরীরের কলকবজাও নড়বড়ে হয়ে গেছে। তাই তওবা পড়েছি ভাই।’ একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে শনিবার সকালে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় এসে এমন মন্তব্য করেছে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ এলাকা থেকে আসা পর্যটক ফারজানা-জাহাঙ্গীর দম্পতি।
একই কথা বলেছেন কুয়াকাটা-বরিশাল রুটের শ্রাবণী পরিবহনের চালক মো. আল-আমিন। তিনি বলেন, ‘সড়ক যেন ছোট্ট ছোট্ট ডোবা হয়ে আছে, যা এখন মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রাস্তায় গাড়ির আয়ু অনেক কমে গেছে। গাড়ির যন্ত্রপাতি নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অল্পতেই গাড়ির ইঞ্জিন বসে পড়বে।’
কুয়াকাটা-ঢাকা রুটের বিলাসবহুল গাড়ি গ্রিন লাইন পরিবহনের চালক মো. আল-মামুন বলেন, ‘সড়কে বড় বড় গর্ত হওয়ায় গাড়ির নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর। এ রুটে গাড়ির স্বাভাবিক গতি থাকে ৭০ থেকে ৭৫ কিলোমিটার। কিন্তু এই ১১ কিলোমিটার গাড়ি চলাতে হয় টিপটিপ করে। সর্বোচ্চ গতি থাকে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার। এতে একদিকে গাড়ির ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তেষের সৃষ্টি হচ্ছে।’
বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে দেশের সর্ব দক্ষিণে অফুরন্ত সৌন্দর্যের সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা। আশির দশক থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর এ সমুদ্রসৈকতটির কদর বাড়তে থাকে। আর তখন থেকেই দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা ছুটে আসছেন কুয়াকাটায়। ভ্রমণপিপাসুদের মনে ঠাঁই মেলে ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সমুদ্রসৈকতটি। একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার এটিই দেশের একমাত্র সমুদ্রসৈকত হওয়ায় পর্যটকের কোলাহলে দিনরাত মুখর থাকে সৈকতটি। বিশেষ করে স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর শীত, বর্ষা, গ্রীষ্ম, শরৎসহ সব ঋতুতেই উৎসবমুখর থাকে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের এ সমুদ্রসৈকত। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে কুয়াকাটায় প্রতিদিন ৮০০ থেকে ৮৫০টি বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, পিকআপ, মোটরসাইকেল ও ট্রাক আসা-যাওয়া করে এবং শুক্র ও শনিবার কিংবা একাধারে তিন-চার দিন সরকারি বন্ধ থাকলে তখন যানবাহনের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে কুয়াকাটা মহাসড়কের আলীপুর-মহিপুর শেখ রাসেল সেতু ইজারা আদায়কারী ম্যানেজার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কলাপাড়ার পাখিমারা বাজার থেকে আলীপুর টোল প্লাজা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন হলে পর্যটকের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।’
জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন মৃধা বলেন, ‘রাস্তার যে অবস্থা তাতে যানবাহন চলাচল দুরূহ। বিষয়টি সওজ কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। জনগণের এবং যানবাহনের কথা বিবেচনা করে এ সড়কটির সংস্কারকাজ দ্রুত করা দরকার।’
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম আতিকুল্লাহ জানান, খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দি রূপসা ইঞ্জিরিয়াস লিমিটেড ২০১৪ সালে উচ্চ আদালতে দায়ের রিটের কারণে কলাপাড়ার পাখিমারা বাজার থেকে আলীপুর পর্যন্ত সড়কের ১১ কিলোমিটার সংস্কারকাজে আইনি নিষেধাজ্ঞা ছিল। চলতি বছরের ২৭ মার্চ উচ্চ আদালত রিট খারিজ করে দেওয়ায় সড়কটি সংস্কারের ক্ষেত্রে আইনি বাধা নেই। ইতোমধ্যে ১১ কিলোমিটার এই সড়ক সংস্কারের জন্য ১৭ কোটি টাকার প্রাক্কলন অনুমোদন হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হবে।
২০০৯-২০১৪ অর্থবছরে এ মহাসড়কের পাখিমারা থেকে শেখ রাসেল সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার অংশের উন্নয়ন কাজ করে ‘রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বরাদ্দ ছিল ২০ কোটি টাকা। ওই কাজ মানসম্মত না হওয়ায় বিল আটকে দেয় সওজ কর্তৃপক্ষ। প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে দুটি দল তদন্ত করে কাজের গুণগত মান নিম্নমানের হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ কারণে সওজ বিভাগ ৮ কোটি টাকার বিল আটকে দেয়। এ ঘটনায় ঠিকাদারের প্রতিনিধি রাশেদুল ইসলাম চূড়ান্ত বিল দাবি করে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। আদালত ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ কিমি মহাসড়কের উন্নয়ন কাজের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। এর ফলে ১০ বছর সংস্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে ১১ কিলোমিটার। গত ২৭ মার্চ আদালত ওই রিট খারিজ করে দেওয়ায় সংস্কারকাজের এখন আর বাধা নেই।