ফসলি জমিতে সিসা কারখানা

ফসলি জমির মধ্যে গড়ে উঠেছে অবৈধ সিসা গলানোর কারখানা। ছবি-সমকাল
কাজী আমিনুল ইসলাম, বোয়ালমারী (ফরিদপুর)
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
ফরিদপুরের বোয়ালমারীর বিল দাদুড়িয়ায় ফসলি জমির মধ্যে গড়ে উঠেছে অবৈধ সিসা গলানোর কারখানা। পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সেখান থেকে বের করে আনা হচ্ছে সিসা। ব্যাটারি পোড়ানোয় এর ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ বাতাসের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে পরিবেশ দূষণের কারণে স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
বোয়ালমারীর চতুল ইউনিয়নের কলারণ ও বিশ্বাসপুর গ্রামের মাঝামাঝি দাদুড়িয়া বিলের ফসলি জমিতে বোয়ালমারী-ময়েনদিয়া সড়কের পাশে এ সিসা কারখানা গড়ে উঠেছে। চারদিকে প্রাচীর ঘেরা, সামনে লোহার গেট। নেই কোনো নামফলক। গভীর রাতে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে আগুনের লেলিহান শিখা। চারদিকে ব্যাটারি পোড়ানোর এসিডের তীব্র ঝাঁজালো গন্ধ। ব্যাটারি পোড়ানোর জন্য তিনটি চুল্লি রয়েছে। তাতে নেই কোনো চিমনি। চুল্লিতে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হচ্ছে। কারখানার চুল্লির ওপর দিয়ে হাই ভোল্টেজ বিদ্যুতের লাইন টানানো রয়েছে। এতে করে যে কোনো সময় ঘটতে পাড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। অবৈধ এ সিসা কারখানার পাশেই রয়েছে এমএইচ গোল্ডেন জুট মিল।
বিশ্বাসপুর গ্রামের আফসার শেখ বলেন, সিসা তৈরির কারখানার কারণে জমির ধানের রং বিবর্ণ হয়ে গেছে। এতে ধানের ফলনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে দাবি করেন তিনি।
বিশ্বাসপুর গ্রামের বাসিন্দা অচিন্ত বিশ্বাস বলেন, সিসা কারখানা সংলগ্ন বিলের উত্তর পাশে পানিতে মাছ নেই। তাই জেলেরা বিলের অন্য পাশে গিয়ে মাছ ধরছেন।
রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা গাজী শাহিদুজ্জামান লিটন বলেন, কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া আর বর্জ্যে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা ‘সাপ্তাহিক চন্দনা’ পত্রিকার সম্পাদক কবি কাজী হাসান ফিরোজ বলেন, সিসা কারখানার কারণে সরাসরি জীববৈচিত্র্য ও মানবদেহের ওপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। এতে পার্শ্ববর্তী পাট কারখানার
শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এমএম নাহিদ আল রাকিব বলেন, সিসা তৈরির কারখানা মানুষ, পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে শিশুদের। গর্ভবতী মহিলাদের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। যেসব শ্রমিক কাজ করেন তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তো রয়েছেই।
চিকিৎসা সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নাল’-এ প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দেশে প্রতি বছর ১ লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষ সিসা দূষণের কারণে মারা যাচ্ছে।
সিসা কারখানায় দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার আলমগীর হোসেন বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে নষ্ট ও বাতিল ব্যাটারি কিনে আনা হয়। সে ব্যাটারিগুলো কারখানায় এনে ব্যাটারির বিভিন্ন অংশ খুলে আলাদা করে পুড়িয়ে সিসা বের করা হয়।
সিসা কারখানার মালিক সামচুল আলম জানান, কারখানার জন্য স্থানীয় ইউপি পরিষদের একটি ট্রেড লাইসেন্স আছে। এর বাইরে পরিবেশ ছাড়পত্র ও কোনো অনুমোদন নেই।
ফরিদপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইদ আনোয়ার বলেন, বোয়ালমারী থেকে কোনো সিসা কারখানা পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি। আবেদন করলেও অনুমোদন দেওয়া হয় না। তিন জানান, এ কারখানা সম্পর্কে তাদের জানা ছিল না। অবৈধ ওই সিসা কারখানা ভেঙে দেওয়া হবে।
বোয়ালমারীর ইউএনও মোশারেফ হোসাইন জানান, কারখানাটির বিষয়ে জানা ছিল না। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।