ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

নাম নেই তালিকায়, তবুও নিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা

নাম নেই তালিকায়, তবুও নিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা

ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রব মিয়া

সোহাগ খান সুজন, শরীয়তপুর

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েও অসৎ উপায়ে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার সামন্তসার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রব মিয়ার বিরুদ্ধে। এমনকি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাতেও তাঁর নাম নেই। অথচ নিজেকে যুদ্ধাহত দেখিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

২০০১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল গোসাইরহাটে ২৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা প্রকাশ করে; যা লাল মুক্তিবার্তা নামে পরিচিত। রব মিয়ার নাম সেখানেও পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলার একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, গোসাইরহাটের ইউএনও বরাবর রব মিয়ার নাম মুক্তিযোদ্ধা গেজেট থেকে বাদ দেওয়া, ভাতাসহ এ-সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা বাতিল চেয়ে আবেদন করেছেন।

ইতোমধ্যে যুদ্ধাহত প্রমাণের পরীক্ষায় রব মিয়ার বিরুদ্ধে সিএমএইচের পঙ্গুত্ব নির্ণয় কমিটির প্রতিবেদন, গোসাইরহাটের লাল মুক্তিবার্তার কপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে ২০১৭ সালের কমিটির মতামত এবং যুদ্ধকালীন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের স্বাক্ষরিত বিভিন্ন প্রমাণিক নথি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এসব নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা গেজেট হয় ২০০৫ সালে। অথচ রব মিয়া ২০০৪ সালের ৮ নভেম্বর গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া নিজেকে যুদ্ধাহত দাবি করলেও সিএমএইচের পঙ্গুত্ব নির্ণয় কমিটি পরীক্ষায় তাঁর বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রতিবেদন দেয়।

গোসাইরহাটের বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, কয়েক মাস রব মিয়ার ভাতা বন্ধ হয়ে থাকলেও পরে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের কোনো কর্মকর্তার যোগসাজশে আবার তা চালু হয়েছে।

যুদ্ধকালে গোসাইরহাট, ডামুড্যার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন ইকবাল আহম্মেদ বাচ্চু। তিনি বলেন, ডামুড্যা, গোসাইরহাটে কোনো যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা নেই। আমি যুদ্ধের সময় এ অঞ্চলের কমান্ডার ছিলাম। কিন্তু রব মিয়াকে কখনও যুদ্ধে দেখিনি। তিনি টাকা-পয়সা দিয়ে গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্ত করে ভাতা পাচ্ছেন। আমি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে রব মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিই। মন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ভাতা বন্ধ করে দেন। কিন্তু তিন মাস পর শুনি তিনি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) থেকে আবারও ভাতা চালু করেছেন।

গোসাইরহাটের বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী ও কাশেম সরদার বলেন, বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা গেজেট হয়েছে ২০০৫ সালে। কিন্তু রব মিয়ার নাম ২০০৪ সালে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটা কীভাবে হলো মন্ত্রণালয় ভালো জানে। রব মিয়া কোনো যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা নন। তার কাছে এর কোনো প্রমাণও নেই।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান রব মিয়া দাবি করেন, তাঁর কাছে মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র ও মুক্তিযোদ্ধা স্মার্ট পরিচয়পত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি মহম্মদ আতাউল গনী ওসমানী স্বাক্ষরিত স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র আছে। কিন্তু সেসব তিনি দেখাতে পারেননি।

রব মিয়া বলেন, ‘আমার পাঁচ শতাংশ পঙ্গুত্ব আছে। যাদের পাঁচ শতাংশ পঙ্গুত্ব রয়েছে তাদের গেজেট প্রয়োজন হয় না। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের সঙ্গে আমার ঝামেলা ছিল, তাই তিনি লালবার্তা থেকে আমার নাম বাদ দিয়েছেন। আর আতাউল গনী ওসমানীর দেওয়া সনদ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে দিয়েছি। আর ২০০৫ সালে গেজেট হলেও আমাকে ২০০৪ সালে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত দেখাল সেটা মন্ত্রণালয়ের ভুল। আমি একজন ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করতেই মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে।’

আরও পড়ুন

×