ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

বীরদর্পে ঘুরছেন আসামিরা, আতঙ্কে সাংবাদিক নাদিমের পরিবার

বীরদর্পে ঘুরছেন আসামিরা, আতঙ্কে সাংবাদিক নাদিমের পরিবার

নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম

আনোয়ার হোসেন মিন্টু, জামালপুর

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন গত ১৫ জুন। তাঁকে রাস্তায় ফেলে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এ ঘটনায় বকশীগঞ্জ থানায় মামলা হলেও বেশির ভাগ আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে। এজাহারভুক্ত বেশির ভাগ আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় ঘুরছেন বীরদর্পে। হুমকি দিচ্ছেন নাদিমের পরিবারের সদস্যদের। এ ছাড়া প্রধান আসামি বরখাস্ত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর জবানবন্দি নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার ‘মিথ্যাচারে’ ন্যায় বিচার নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে বাদীর পরিবার।

জানা গেছে, সাংবাদিক নাদিম হত্যার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবু গত ২৩ জুন জামালপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল্লাহ পিয়াসের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেন। তখন দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেওয়ার কথা বলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ওসি আরমান আলী, যা সব সংবাদমাধ্যমে প্রচারও হয়। কিন্তু পরে বাদী ও আইনজীবীরা প্রমাণ পান বাবুর জবানবন্দি নিয়ে ‘মিথ্যাচার’ করেছেন ওই তদন্ত কর্মকর্তা। বিষয়টি জানাজানি হলে ন্যায় বিচার নিয়ে শঙ্কায় পড়ে নিহত নাদিমের পরিবার। জবানবন্দি নিয়ে মিথ্যাচারের প্রতিবাদ, বাবুকে ফের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও এজাহারভুক্ত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে দিনভর অনশন করেন নাদিমের পরিবারের সদস্যরা।

নাদিম হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে দেশজুড়ে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নসহ গোটা দেশের সাংবাদিক সমাজ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে। আইনমন্ত্রীও মামলাটি দ্রুত বিচার আইনে নেওয়ার কথা বলেন। মামলাটি প্রথমে বকশীগঞ্জ থানা পুলিশ, পরে ডিবি হয়ে বর্তমানে সিআইডির তদন্তাধীন।

নাদিমের গ্রামের বাড়ি বকশীগঞ্জ উপজেলার নিলক্ষীয়া ইউনিয়নের গোমেরচরে গেলে সাংবাদিক পরিচয় জেনে আহাজারি শুরু করেন নাদিমের মা আলেয়া বেগম। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে ঘুরছেন প্রশাসনের দ্বারে। তিনি বলেন, ‘তোমরা আমার বাবা নাদিমকে এনে দাও। তা না হলে আমাকেও কবর দিয়ে যাও।’ ছেলের বিচার কি সাগর-রুনির মতো হবে– এই শঙ্কাতেও ভুগছেন তিনি।

নাদিমের বাবা আব্দুল করিম আক্ষেপ করে বলেন, ‘নাদিম ছিল আমার বংশের একমাত্র প্রদীপ। আমি মারা গেলে ঘরে বাতি জ্বালানোরও কেউ থাকবে না। পাষণ্ডরা আমার ছেলেকে রাস্তায় ফেলে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করেছে। হত্যাকারীদের ছবি সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গেলেও পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না। বেশির ভাগ আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরছে। এ কারণে ভয়ে আছি আমরা।’

নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম জানান, মামলার নামীয় ২২ আসামির মধ্যে র‍্যাব পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তবে পুলিশ তিন মাসেও এজাহারভুক্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার দায় অস্বীকার করেন। কিন্তু পুলিশ তাদের মিথ্যা আশ্বাস আর সান্ত্বনার বাণীই শুনিয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে তাদের হুমকি দিচ্ছেন। বারবার পরিবর্তন করা হচ্ছে তদন্তকারী সংস্থা।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ইউসুফ আলীর দাবি, র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছিলেন প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবু। আদালতেও হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেওয়ার কথা বলেছিলেন মামলার তখনকার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ওসি আরমান আলী; যা ছিল পুরোপুরি মিথ্যাচার। মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্য ছিল ওই তদন্ত কর্মকর্তার। তিনি বলেন, উচ্চ আদালত থেকে প্রধান আসামি বাবুর জামিন হয় গত মঙ্গলবার। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে নাদিমের স্বজন ও স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। এরপর গতকাল বুধবার আপিল বিভাগ তাঁর জামিনের আদেশ স্থগিত করায় স্বস্তি ফিরেছে।

জামালপুর প্রেস ক্লাব সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদার ভাষ্য, প্রধান আসামি বাবুর জবানবন্দি নিয়ে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার মিথ্যাচারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ জেলার সাংবাদিক সমাজ। বাবুকে ফের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান তিনি।

মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পরিদর্শক গোলক চন্দ্র বসাক সমকালকে বলেন, তদন্তের দায়িত্ব পেয়েই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

আরও পড়ুন

×