ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

সেতু ঘিরে সচল জীবন-জীবিকা

সেতু ঘিরে সচল জীবন-জীবিকা

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১৭:১৬ | আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১৭:১৬

মাসখানেক আগে ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন রাজিয়া খাতুন। দৈনিক মজুরি পেতেন আড়াইশ টাকা। তা দিয়ে সংসার চলত না। বাধ্য হয়ে পেশা বদলান। এখন কুমারখালী উপজেলার শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতুপাড়ে পিঠা তৈরি করে বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিন বিকেলে থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তাঁর প্রায় ৩০০ চিতই পিঠা বিক্রি হয়।

রাজিয়া খাতুন নন্দনালপুর ইউনিয়নের বড়ুলিয়া গ্রামের ইউসুফ শেখের স্ত্রী। তাঁর স্বামী হৃদরোগী ও অকর্মঠো। তাঁর ভাষ্য, পিঠা বিক্রি করে খরচ বাদে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা থাকে তাঁর। সেতুটি তাঁর জীবিকা ও জীবনমান বদলে দিয়েছে।

শুধু রাজিয়াই নন, সেতু ঘিরে জীবন-জীবিকা বদলে গেছে বহু মানুষের। তাদের মধ্যে যদুবয়রা গ্রামের লিটন শেখ বলেন, তিনি আগে ভ্যান চালিয়ে আয় করতেন। তবে সেতু চালুর পর দিনে ভ্যান চালান। আর রাতে সেতুর ওপর ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। প্রতিদিন তাঁর বাড়তি আয় থাকে ৭০০-৮০০ টাকা।

সেতুটি বিনোদনকেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। নানা বয়সী মানুষ প্রতিদিনই ভিড় করছেন সেতুতে। জনসমাগম ঘিরে ক্ষুদ্র ব্যবসা জমে উঠেছে। সেতুর দুই পাড়ে চলছে চা-পান, চটপটি, শরবত, বাদাম, কুলফি মালাই ও বেলুন বেচাকেনা। গড়ে উঠেছে ছোট ছোট রেস্তোরাঁ।

জানা গেছে, গড়াই নদের কূলঘেঁষে ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে কুমারখালী উপজেলা। সেখানে প্রায় ছয় লাখ মানুষের বাস। তার মধ্যে পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়ন নদের উত্তর পাড়ে, আর দক্ষিণ পাড়ে পাঁচটি ইউনিয়ন। যুগ যুগ ধরে দুই পাড়ের মানুষের মেলবন্ধনে বাধা ছিল নদটি। স্বাধীনতার ৫২ বছর পর সেই বাধার অবসান ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। গড়াই নদের ওপর প্রায় ৬৫০ মিটার সেতু ও ৫৫০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। চলতি বছরের ২৮ জুন সেতুটি খুলে দেওয়া হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, গ্রাম থেকে বেগুন, মরিচ, ঝিঙা, শাকসবজি হেঁটে ও বিভিন্ন পরিবহনে করে শহরে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। সে সময় কথা হয় জোতমোড়া গ্রামের কৃষক শহিদ শেখের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, আগে নৌকায় যেতে সময়, খরচ ও ভোগান্তি বেশি হতো। এখন সহজেই সকাল সকাল বাজারে গিয়ে বেচাকেনা করে বাড়ি ফিরতে পারেন।

পঁচাত্তর-ঊর্ধ্ব আবু বক্কর বলেন, ‘এক সময় নদটি ছিল অভিশাপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু করে দিয়েছেন বলে এখন হেঁটেই চলাচল করতে পারি।’

বিকেলে সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে হরেক রকম দোকান। দোকানিরা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বেচাকেনায় ব্যস্ত। নানা বয়সী মানুষের ভিড়। কেউ এসেছেন সেতু দেখতে, কেউবা ঘুরতে।

এ সময় কথা হয় চটপটি বিক্রেতা আবু ফজলের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, আগে বিভিন্ন বাজারে, পথেঘাটে ও স্কুলমাঠে ব্যবসা করতেন তিনি। তখন দিনে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা আয় হতো। তবে সেতু নির্মাণের পর সেখানে স্থায়ী দোকান বসিয়েছেন। প্রতিদিন ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা আয় হয়।

পৌর শহরের সোনালি হস্তশিল্পের মালিক জসিম উদ্দিন বলেন, সেতু চালুর দিন থেকেই শহরে লোকসমাগম বেড়েছে। ব্যবসাও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। রাহাত বেকারির প্রোপ্রইটর শিশির জানান, আগের চেয়ে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে।

কুমারখালী কাপুড়িয়া হাটের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানার দাবি, এক সেতু উপজেলাবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। আবার প্রাণ ফিরে পাচ্ছে কুমারখালীর তাঁতশিল্প।

কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, অর্ধশতাব্দীর চাওয়া পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে গড়াই নদের দুই পাড়ের মানুষের মেলবন্ধন, জীবনমানের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হয়েছে। 

আরও পড়ুন

×