ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বৃষ্টি হলেই দাম বেড়ে যায় পণ্যের

বৃষ্টি হলেই দাম বেড়ে যায় পণ্যের

এ মান্নান আকন্দ, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৩ | ১০:০৮ | আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩ | ১০:০৮

ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে সিমেন্ট নিয়ে যাচ্ছিলেন ফরমান আলী। এমন সময় শুরু হয় বৃষ্টি। পলিথিল না থাকায় ভিজে যায় সিমেন্টের কয়েকটি বস্তা। এ কারণে মালিক ৫০ টাকা ভাড়া কম দেন। পরে সিমেন্ট নামিয়ে সুন্দরগঞ্জ বাজারে যান ফরমান। সাধ্য অনুযায়ী সবজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে দরদাম শুরু করেন। চড়া দামে মেলাতে পারছিলেন না হিসাব।

তিন দিন ধরে বৃষ্টির কারণে মরিচের দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকা বেড়েছে বলে জানান দোকানি হামিদুল ইসলাম। সেখানে ভ্যানচালক ফরমান আলী বলছিলেন, বৃষ্টিবাদলে ভাড়া কমে। অথচ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। খেটে খাওয়া মানুষের রোজগার তেমন থাকে না। রিকশা-ভ্যান চালানো বন্ধ থাকে। অথচ কাঁচাবাজারে আগুন লাগে।

পৌর শহরের রামডাকুয়া মহল্লার বাসিন্দা ফরমান আলী। ২০ বছর ধরে ভ্যান চালান তিনি। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলে এইচএসসি পাস করে ঢাকায় চাকরি করছে। এতদিন ভালোভাবে সংসার চললেও এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠছে তাঁর।

দিনে ৫০০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন উপজেলার শান্তিরাম গ্রামের হাফিজার রহমান। ছসংসারে দিনে চাল লাগে প্রায় তিন কেজি, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৮০ টাকা। তেল, ডালসহ অন্যান্য পণ্য অবশিষ্ট টাকায় কিনতে হিমশিম খেতে হয়। হাফিজারের ভাষ্য, বৃষ্টিবাদলে প্রতিটি জিনিসের দাম ১০ থেকে ৫০ টাকা কেজিপ্রতি বেড়ে যায়।

খুচরা ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি হলে আড়তদাররা প্রতিটি জিনিসের দাম কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। সে কারণে খুচরা বিক্রেতারা বেশি দামে বিক্রি করেন।

বাজার ঘুরে জানা গেছে, গত সপ্তাহে কাঁচামরিচ ২০০, আলু ৬০ থেকে ৪৫, বেগুন ৪০ থেকে ৫০, পটোল ৪৫ থেকে ৫০, কচু ৬৫ থেকে ৭০, করলা ৬০ থেকে ৬৫, শসা ৪০ থেকে ৫০, ঝিঙে ৫০ থেকে ৫৫, কুমড়া ৫০ থেকে ৬০, কাঁকরোল ৫০ থেকে ৫৫, মুলা ৫০ থেকে ৫৫, পেঁপে ৩০ থেকে ৩৫, পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০, রসুন ২৫০ থেকে ২৬০ এবং আদা ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে চার দিনের মধ্যে শনিবার হতে মরিচের দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকা বেড়েছে। অন্যান্য পণ্যেও কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা দাম বেড়ে গেছে। শাকের দামও বেড়েছে কেজিপ্রতি অন্তত ২০ টাকা।

বৃষ্টিবাদলের কারণে শাক ও সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান উপজেলার তারাপুর চরের চাষি এমদাদুল হক। তিনি বলেন, বেগুন, মুলা, পটোল, লাল ও মুলাশাক সবে উঠতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে টানা বর্ষণে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। বীজ, সার, দিনমজুর, হালচাষ ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় সবজি চাষাবাদে খরচ উঠছে না।

বৈরী আবহাওয়ার এ সময়ে প্রতিদিন পণ্যের দাম ওঠানামা করছে বলে জানান দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আড়তদাররা সিন্ডিকেট করেন। 

পাইকার আসাদুল ইসলামের ভাষ্য, বৃষ্টির সময় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের দাম বেশি নেন চাষিরা। তাছাড়া পরিবহন খরচ বেশি। সে কারণে দাম বেশি নেওয়া হয়। মহাজনরা হঠাৎ দাম বাড়িয়ে দেন বলে দাবি আরেক ব্যবসায়ী সাজা মিয়ার। 

ইউএনও মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টিবাদলে কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এসব পণ্য সরাসরি ক্ষেত থেকে আসে। এর বাইরের পণ্যের বাজার দর নিয়ন্ত্রণে তদারকি জোরদার করা হবে।

আরও পড়ুন

×