কোনাবাড়ীতে পুলিশের গাড়িতে আগুন

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে পুড়িয়ে দেওয়া পুলিশ ভ্যান - সমকাল
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৩ | ১৫:৫৬ | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৩ | ১৫:৫৬
বেতন বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে শ্রমিকদের বিক্ষোভ ষষ্ঠ দিনে গড়িয়েছে। রোববার পুলিশ সদস্য বহনকারী একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে আন্দোলনের তৃতীয় দিনে কারখানা ভাঙচুরে জড়িতদের পরিচয় নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। কয়েকটি কারখানার কর্মকর্তা বলেছেন, ওই ব্যক্তিদের পোশাক-পরিচ্ছদে কারখানার শ্রমিক মনে হয়নি। তাই ধারণা করছেন, তৃতীয় কোনো পক্ষের ইন্ধনে হামলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মৌচাক থেকে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ধরে গাজীপুরের দিকে যাচ্ছিল। কোনাবাড়ীতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সেটি থামিয়ে পুলিশ সদস্যদের নামিয়ে দেয়। এ সময় চালকসহ তিন-চারজন প্রাণভয়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যান। এ সময় কয়েকজন শ্রমিক ভ্যানটি উল্টে মহাসড়কে ফেলে দেয়। পরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি পুড়ে যায়। পরে উত্তেজিত শ্রমিকরা কয়েকটি স্থানে দোকানপাটে ভাঙচুর চালায়। সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে তারা।
সংবাদ পেয়ে শিল্পপুলিশ ও কোনাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত শ্রমিকদের লাঠিচার্জ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। পরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিন দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকরা। তারা মিছিল নিয়ে একটি কারখানায় ভাঙচুর করে। পুলিশ বাধা দিতে এলে থেমে থেমে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। একই অবস্থা ছিল মহানগরীর ভোগরা ও রওশন সড়ক এলাকায়।
কর্মস্থলের নাম না জানানোর শর্তে এ প্রতিবেদকের কথা হয় কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে। তারা হলেন– আলমগীর হোসেন, হারুন অর রশিদ, কবীর আহমেদ, জাকির হোসেন, ফরিদা পারভীন। তারা বলেন, বেতন বাড়িয়ে ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন। দাবি না মানা পর্যন্ত তা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, রোববারও শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছিল। তারা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে। পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে পুড়িয়ে দিয়েছে। পরে লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করেছে পুলিশ। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কয়েকটি জায়গায় পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে শ্রমিক বিক্ষোভের তৃতীয় দিনে ২৬ অক্টোবর দুপুরে পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার ১০-১২টি শিল্পকারখানায় ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। এ সময় সড়কের পাশে থাকা একটি জিপ গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক দেওয়ানের ব্যক্তিগত কার্যালয়। সেখানে থাকা দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। দিনভর পুলিশ-শ্রমিক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত কারখানার মধ্যে শিশু খাদ্য তৈরির কারখানা কোলা-কোলা, মৌচাকের হানিফ স্পিনিং মিলস, সফিপুর আনসার একাডেমি এলাকার গোমতী টেক্সটাইল মিলস ও নিটওয়্যার লিমিটেডের নাম জানা গেছে। সব মিলিয়ে কারখানাগুলোর আনুমানিক ১৫-১৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
কারখানার কয়েকজন কর্মকর্তা ভাঙচুরের জন্য তৃতীয় পক্ষের দিকে আঙুল তুলেছেন। তাদের ভাষ্য, উত্তেজিত শ্রমিকরা যখন কারখানায় হাজির হন, এর অনেক আগে ভাঙচুর চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশের উপস্থিতি যখন কম ছিল, তখনই তাণ্ডব চালানো হয়।
গোমতী টেক্সটাইল মিলস ও নিটওয়্যার লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ফরহাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, সেদিন শত শত শ্রমিক তাদের কারখানার প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারা নিরাপত্তাকর্মী হুমায়ুন কবীরকে পিটিয়ে আহত করে। পরে বিভিন্ন তলায় হামলা চালিয়ে আসবাব, কম্পিউটার, সুইং মেশিন, জানালার কাচসহ নানা জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। এতে তাদের আনুমানিক ৭০-৮০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
যে যুবকরা ভাঙচুর করেছে, তাদের পোশাককর্মী মনে হয়নি এই কর্মকর্তার। তিনি বলেন, পোশাক-আশাকে তাদের টোকাই মনে হয়েছে। কোনো পক্ষ হয়তো গার্মেন্টশিল্প ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে। এ জন্য এভাবে তাণ্ডব চালানো হয়।