ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

১৭৬ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ বাঁচবে তো

১৭৬ কোটি টাকার শহর  রক্ষা বাঁধ বাঁচবে তো

ফরিদপুরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের বিস্তৃত ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা সমকাল

 সাহাদাত হোসেন পরশ ও হাসানউজ্জামান, ফরিদপুর থেকে  

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৪ | ০০:২২ | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪ | ০৭:০২

পদ্মার ভাঙন থেকে ফরিদপুর শহরের রক্ষাকবচ বলা হয় শহর রক্ষা প্রকল্পকে। প্রায় দেড় দশক আগে যখন এ প্রকল্প নেওয়া হয়, তখন সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ফরিদপুর শহর এবং সংলগ্ন এলাকাকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি কুমার নদের পানিপ্রবাহ বাড়ানো এর মূল লক্ষ্য। এতে জেলার সদর এলাকা ছাড়াও ভাঙ্গা ও নগরকান্দার বিস্তৃত জনপদে সেচ ব্যবস্থারও উন্নয়ন ঘটবে। ২০০৯-২০১৪ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা এ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১৭৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। তবে এক শ্রেণির মানুষের কারণে এই শহর রক্ষা প্রকল্প এখন হুমকির মুখে। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই বাঁধের ওপর দিনরাত চলছে বালু ও মাটিবাহী ট্রাক এবং কাভার্ডভ্যান। সিঅ্যান্ডবি ঘাট, ধলার মোড়, মদনখালী, গদাধর ডাঙ্গী, ভাঙা, সাইনবোর্ড এলাকাসহ পদ্মাপাড়ের দুই ইউনিয়ন– নর্থ চ্যানেল, ডিক্রিরচরসহ বেশ কিছু এলাকায় সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী চক্র দেদার নদীর বালু উত্তোলন ও ফসলি জমির মাটি কেটে সাবাড় করছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এমন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে তারা। 

সম্প্রতি ফরিদপুরের পদ্মার চর ও আশপাশ এলাকা ঘুরে দিনদুপুরে একটি চক্রকে নদীর বালু তুলতে ও মাটি কাটতে দেখা গেছে। ফলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে আবারও এসব এলাকার ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। এমনকি হুমকির মুখে পড়তে পারে বেশ কয়েকটি সেতু এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 

জানা গেছে, বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে ইউসুফ মাতুব্বরের ডাঙ্গীতে পদ্মাপাড়ে ৭০ মিটার জায়গায় ব্লক ও জিও ব্যাগ বসাতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া পাল ডাঙ্গীতে ১৯১ মিটার পদ্মার পাড় সংস্কারে ব্যয় হবে ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। একই সঙ্গে ফরিদপুর শহর রক্ষা বাঁধের পুনঃসংস্কার, এ প্রকল্পের মধ্যে সিঅ্যান্ডবি ঘাট এবং নর্থ চ্যানেল যুক্ত করে ৩৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের সমীক্ষাও প্রায় শেষ পর্যায়ে।  
এ ছাড়া কুমার নদ পুনর্খননে আড়াইশ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হলেও এর সুফল মেলেনি। ফেরেনি নাব্য। অথচ কুমার নদের পানিপ্রবাহ বাড়ানোর সঙ্গে ফরিদপুর শহর রক্ষা বাঁধের প্রকল্পটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।  

সরকারি স্কুল ঘিরে শঙ্কা 

ফরিদপুর সদর উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদ পদ্মাপাড়ের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ৫  নম্বর ওয়ার্ডে টেপুরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত নদীভাঙনের মুখে ছয়বার স্থান বদল করতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। পদ্মার ভাঙা-গড়ার সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছেন বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ইউসুফ আলী মাতুব্বরের ছেলে কাশেম মাতুব্বর। বর্তমানে আবারও পদ্মা ভাঙতে ভাঙতে বিদ্যালয়ের ২০০ গজের মধ্যে এসে গেছে। কাশেম আক্ষেপ করে বলেন, ‘বালুখেকোদের কথা মুখে আনতেও ঘৃণা করে। একসময় আমাদের ৩০ বিঘা জমি ছিল। পদ্মার ভাঙনে এখন মাত্র ৬ বিঘা আছে। এখন যেভাবে ভাঙছে, দু-এক বছরের মধ্যে কবর দেওয়ার মাটি থাকবে কিনা সন্দেহ। পদ্মা থেকে অবৈধভাবে বালু তুলতে গিয়ে গোটা এলাকার সর্বনাশ ঘটেছে। বারবার গতিপথ পরিবর্তন হয় নদীর। গত বর্ষায়ও নর্থ চ্যানেলের ৩০০ মানুষের ভিটা ও জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এখনও প্রতি রাতে নদী থেকে বালু তোলা হয়। এই জনপদকে বাঁচাতে বালু তোলা ও মাটি কাটা থামাতে হবে।’ 
কাশেম মাতুব্বর আরও বলেন, এই বর্ষায় স্কুলের মূল ভবন নদীভাঙনে বিলীন হলেও আমাদের পক্ষে পুনরায় জায়গা দিয়ে ভবন তৈরি করা সম্ভব নয়। পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরাই কোথায় গিয়ে ঠাঁই নেব, জানি না!’

নর্থ চ্যানেলে যারা জড়িত

সরেজমিন এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাটি ও বালুখেকো অনেককে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোফাজ্জেল হোসেন। এ ছাড়া ওই ইউনিয়নেই চেয়ারম্যানের নিজের ইটভাটা রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন বাইরে থেকে ট্রাক ট্রাক ফসলি জমির মাটি ঢুকছে। চেয়ারম্যান তাঁর ভাগনে মো. রায়হানকে দিয়ে মাটি তোলা ও বালু উত্তোলনের কাজ করেন। ওই জনপদে আরও যারা মাটি তুলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন– ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম পান্নু, ৮ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগ সভাপতি নাজমুল হোসেন, একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বাদশা মোল্লা, আবুল শেখ ওরফে ঘোড়া আবুল, আলিম বিশ্বাস, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জব্বার, ফজল প্রামাণিক, নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাসেল ফকির, জাকারিয়া, সিরাজ, রিপন মীর, শাহেদ মোল্লা, বাদশা মোল্লা ও ইটভাটা মালিক রাসেল চৌধুরী। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মজিদ ফকিরের ছেলে রাসেল ফকির মাটির কারবার করেন এই রাসেল চৌধুরীর সঙ্গে। ওই গ্রামের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জুনায়েত হোসেন বলেন, ‘যারা ফসলি জমির মাটি কাটছে তারা এত প্রভাবশালী, কেউ ভয়ে মুখ খোলে না। প্রতি বিঘা জমির মাটি এক বছরের জন্য ৩ থেকে ৫ লাখ টাকায় কিনে কয়েক গুণ লাভ করছে মধ্যস্বত্বভোগী একটি গ্রুপ। ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির পাশাপাশি খাসজমির মাটিও তারা কেটে নিয়ে যায়। দেখা গেল, একজন জমির মাটি বিক্রি করে দেওয়ার কারণে পাশের জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হন। এসব ঝামেলা নিয়ে মাঝে মাঝে সালিশ-বৈঠকও করতে হয়। 

হুমকির মুখে সেতু

নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নে প্রবেশ করতে সবচেয়ে বড় যে সেতু পার হতে হয়, তার নাম গোলডাঙ্গী। সরেজমিন দেখা যায়, সেতুর দু’পাশে ফসলি জমির মাটি দিনদুপুরে কেটে নেওয়া হচ্ছে। মাটি ও বালুখেকোদের কারণে গোলডাঙ্গী সেতু লাগোয়া বড় বড় কূপ তৈরি হয়েছে। সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে এক কৃষক বলেন, সেতু কতদিন টেকে, ঠিক নেই। আগে সেতু থেকে অনেক দূরে নদীর গতিপথ ছিল। মাটি ও বালু কাটার কারণে আশপাশে ভেঙে যাচ্ছে। ফলে সেতুও হুমকির মুখে। এ ছাড়া নর্থ চ্যানেলে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে নির্মাণাধীন আরেকটি সেতু একই কারণে হুমকির সম্মুখীন।
  
ধলার মোড় ও সিঅ্যান্ডবি ঘাট গিলছে ওরা

ফরিদপুরে স্থানীয়ভাবে পদ্মাপাড়ের একটি নান্দনিক পর্যটন স্পট ধলার মোড়। এই মোড়, আশপাশের পদ্মার চর এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে মাটি কাটছে কয়েকটি চক্র। বালু উত্তোলনের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের কেউ কেউ এরই মধ্যে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের কাছে প্রতীকার চেয়ে আবেদন করেছেন। সমকাল কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে নুরুল হক জানান, ধলার মোড়ে ১ একর ৯৩ শতাংশ জমি রয়েছে তাদের। কিন্তু পাশের দাগ থেকে মাটি কাটার কারণে তাদের জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়। দিনের পর দিন পাশের জমি থেকে মাটি উত্তোলনের কারণে তাঁর জমির একাংশ ভেঙে পুকুরে পরিণত হয়েছে। ফসল চাষ করার কোনো উপায় নেই। 

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এক সরকারি গেজেটে বলা হয়– উর্বর কৃষিজমির মাটি কাটা যাবে না। কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির মাটিও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে উত্তোলন বেআইনি। কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি বিনষ্ট হলেও কাটা যাবে না। ড্রেজার বা এক্সক্যাভেটরের মাধ্যমে মাটি কাটা যাবে না, যাতে পাশের জমি বিনষ্ট হয়।  
স্থানীয়রা জানান, ধলার মোড়ে যারা বালু ও মাটি কাটছে তাদের মধ্যে রয়েছেন– মো. আজম, শের আলী, মোকলেস, রোমান, স্বপন ও ডিক্রিরচর ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সিরাজুল হক কাওসার। এর মধ্যে আজমের দুটি এক্সক্যাভেটর আছে। এ ছাড়া তিনি স্থানীয় বিল্লাল, রুবেল ও জাকিরের জমি দখল করে মুরগির খামার তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। জানা গেছে, অবৈধ বালু উত্তোলন নির্বিঘ্ন করতে প্রতি এক্সক্যাভেটরে দিনে ১৫ হাজার টাকা প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে দেওয়া হচ্ছে। মাঝে মাঝে প্রশাসন নামকাওয়াস্তে অভিযান চালায়। সামান্য জরিমানা করে এক্সক্যাভেটর ছেড়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি ধলার মোড়ে আটটি এক্সক্যাভেটরকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)। জরিমানার কয়েক দিন পর থেকে পুরোনো দৃশ্যের দেখা মেলে। এ চক্রে আছেন ডিক্রিরচর ইউনিয়নের শ্রমিক লীগ নেতা জাহাঙ্গীর শেখ ও সেলিম। 

ফরিদপুর সদরে বালু যাদের ভাগ্য গড়ে দিচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন– ক্ষিদির বিশ্বাসের ডাঙ্গীর শাহজাহান শেখ, জাহিদ শেখ, ভাটি লক্ষ্মীপুরের রুহুল, উত্তর টেপাখোলার রাব্বি, ফরিদাবাদের আরিফ ও পালডাঙ্গীর দুলাল মিয়া। এ ছাড়া ডিক্রিরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু ফকির ও তাঁর সহযোগী নিজাম শেখের লোকজন সিঅ্যান্ডবি ঘাট এলাকায় রাতের আঁধারে পদ্মার চর থেকে বালু কেটে জাহাজে সিঅ্যান্ডবি ঘাটে আনেন। সিঅ্যান্ডবি ঘাটে বেশ কিছু বালুর গদিও আছে। কিছু গ্রুপ রাজবাড়ীর মোটা বালু এনে পদ্মার চিকন বালুর সঙ্গে মিশিয়ে প্রতারণা করে বেশি দামে বিক্রি করছে।  
বালুখেকোদের একজন শের আলী। তাঁর খাস কথা, ‘নদী পরিষ্কার করতেই তো বালু কাটছি। এতে নদীর উপকার ও আশপাশের মানুষের ভালো হচ্ছে। প্রতি সিএফটি বালু ২ টাকা বিক্রি করি। আমার নিজের ভেকু আছে। প্রশাসনের অনুমতি নেই, তো কী হয়েছে? আজমও বালুর কারবার করছে। সে ভেকু ভাড়া নেয়।’ বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করে ডিক্রিরচর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সিরাজুল হক কাওসার বলেন, ‘এসি ল্যান্ডের দৌড়ানির কারণে কয়েক দিন ভেকু নামাতে পারছি না। আমার ভেকু বন্ধ আছে। এর পরও এখন কেউ রাতের আঁধারে নামান। কীভাবে আবার ভেকু নামাতে পারব– সেটা ভাবছি।’ 

ভাগনের দায়িত্ব নেবেন চেয়ারম্যান  

নর্থ চ্যানেল ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জেল বলেন, ‘আমার ভাগনে মাঝে মাঝে মাটির কাজ করত। এর পর কিছুদিন তাকে বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরে দেখলাম, অন্যরা মাটি-বালুর কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। এখন যদি আবার অভিযোগ ওঠে, তাহলে আবার বিরত রাখব।’ মামার জোরে ভাগনে এ ধরনের কর্মকাণ্ড দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছে– এমন অভিযোগে চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনেকেই তো এই কারবার করছে। তাদের সবাইকে ধরেন। মদনখালী স্লুইসগেটে চ্যানেলের ভেতরে দিন-রাত কারা মাটি কাটছে? অনেক সময় বাংলা ড্রেজার দিয়ে ঘণ্টায় ১৪ হাজার ফুট বালু উত্তোলন করা হয়।’ 
আপনার ইটভাটায় বসতভিটার জমি থেকে মাটি আনা হচ্ছে– এমন অভিযোগে মোফাজ্জেল বলেন, ‘আমার বাপ-দাদার জমি থেকে মাটি আনছি। যদি পরিবেশ নষ্ট করি, তাহলে সবার ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হোক। সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করছি।’   

নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের মজিদ ফকির বলেন, ‘আমি সার ও কীটনাশকের ব্যবসা করি। আমার ছেলে চাকরি খুঁজছে। সে কেন মাটি-বালুর কারবার করবে? মোফাজ্জেল চেয়ারম্যান আমার জমির পাশের মাটি কেটে সব সাবাড় করছে।’ 

সার্বিক বিষয়ে ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, ‘বালু উত্তোলন ও কৃষিজমি থেকে মাটি কাটার কোনো তথ্য পেলে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানানো হয়। ফরিদপুর শহর রক্ষা বাঁধ পুনঃসংস্কার ও প্রকল্পটির আওতা বাড়াতে একটি সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। এর পর এটি একনেকে পাঠানো হবে।’ 

ফরিদপুর পাউবো সদর সার্কেলের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, ‘কেউ পুরোপুরি অবৈধভাবে বালু তুলছে। আবার কেউ বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে। সরকারি সংস্থাটির ভাষ্য, নদীতে চলাচল নির্বিঘ্ন করতে চ্যানেল ঠিকঠাক রাখতে মাঝে মাঝে ড্রেজিং করা হয়। যদিও এর পর নদী থেকে তোলা বালু ঘিরে চলে নানা অনিয়ম। লিয়াজোঁ করে ঘনিষ্ঠ ঠিকাদাররা এসব বালু নামমাত্র নিলামে নিয়ে যাচ্ছে। নিয়ম আছে, যেখানে বাঁধ বা ব্লক দেওয়া আছে, তার ৩০০ ফুটের মধ্যে কোনো ড্রেজার লাগানো যাবে না। এটারও ব্যত্যয় হচ্ছে। কাজ করার ক্ষেত্রে কোনো সংস্থার মধ্যে সমন্বয় নেই। শহর রক্ষা বাঁধের ওপর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে দিন-রাত যেসব মালবাহী ট্রাক চলাচল করছে, তা ঠেকাতে আমাদের হাতে শক্ত কোনো ফোর্স নেই। এতে বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে হাজারবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কর্ণপাত করছে না।’

ফরিদপুর নৌবন্দরের নদী খনন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মো. রুবায়েত বলেন, ‘ড্রেজিং করে বালু উত্তোলনের পর ফেলার জায়গা পাচ্ছি না। জেলা প্রশাসন থেকে অনুমোদন না পাওয়ায় আমরা বন্দর এলাকায় বালু কেটে নদীর নাব্য ফেরাতে পারছি না। সরকারিভাবে চারটি জাহাজ এখানে অযথা পড়ে আছে। কিন্তু বালু কেটে পদ্মার নাব্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন বৈধ বালুমহাল।’ 
 

আরও পড়ুন

×