ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচন
ভোট দিতে গেলেন না এমপি শান্ত

মোহিত উর রহমান শান্ত- ফাইল ছবি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫:৪৮ | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪ | ১৭:০১
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিতে যাননি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত। শনিবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে তিনি নিজেই সমকালকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে কী কারণে সিটি নির্বাচনে ভোট দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখছেন তা নিয়েও বিস্তারিত বলেছেন এমপি শান্ত।
সমকালকে এমপি শান্ত বলেন, ‘আমি যে ওয়ার্ডে থাকি সেখানে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শিক একাধিক কর্মী প্রার্থী হয়েছেন, যারা বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার হয়ে অনেক পরিশ্রম করেছেন। আমি একজনকে ভোট দিতে পারবো না। আবার মেয়র পদে মূল তিনজন প্রার্থীর মধ্যে দুজন প্রার্থী নৌকার জন্য নির্বাচন করেছেন। তাদের মধ্যে একজনকে ভোট দেওয়া আমার জন্য কষ্ট হবে। এজন্য তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমি আমার মৌলিক অধিকার থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখলাম।’
ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার পেছনে রাজনৈতিক কোনো কারণ আছে কি না এমন প্রশ্নে শান্ত বলেন, ‘একজন প্রার্থী অভিযোগ তুলেছেন আমি হয়তো কারও পক্ষে সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু বাস্তবে কারো পক্ষে বলেছি, এমন কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। ভোট না দেওয়ার পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ নেই।’
আপনার সমর্থকরা একজন প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করেছেন- এমন প্রশ্নে এমপি শান্ত বলেন, ‘আমার সমর্থক বলে কিছু নেই, সবাই শেখ হাসিনার কর্মী। তারা তাদের মতো করে তাদের প্রার্থীর পক্ষে আছেন। এক্ষেত্রে যারা বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন তাদের বড় একটি অংশ নির্বাচন করেছেন সাদেকুল হক খান মিল্কী টজুর পক্ষে এবং একটা অংশ নির্বাচন করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলমের পক্ষে।’
কোনো ক্ষোভ নয়, আবেগ থেকে নির্বাচনে ভোট দিতে যাননি এমনটি জানিয়ে এমপি শান্ত আরও বলেন, যারা বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন, তারা ভীষণ রকমের মোহ:মুক্ত হয়ে অর্থের বিরুদ্ধে আদর্শের লড়াইয়ে আমাকে জিতিয়েছিলেন। যারা আমাকে জিতিয়েছেন তাদের কারো একজনকে বেছে নিতে পারব না বলে আমি ভোট দিতে যাইনি।
নির্বাচনের পরিবেশ সম্পর্কে এমপি বলেন, ভীষণ রকমের সুন্দর নির্বাচন হচ্ছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য ট্রেডমার্ক হয়ে থাকবে। কারণ, নির্বাচনে কোনো ধরনের অভিযোগ-সহিংসতা তৈরি হয়নি। এ নির্বাচন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতাকে প্রমাণ করেছে। কারণ, মেয়র বা কাউন্সিলর প্রার্থী যারাই আছেন না কেন প্রশাসনিক কোনো ধরনের সহযোগিতা কোন সংস্থা থেকেই পাননি।
এক বছরের বেশি সময় আগে জেলা ও মহানগর শাখার নতুন কমিটি গঠনের পর অনেকটা প্রশমিত হয়ে আসছিল আওয়ামী লীগের স্থানীয় বিভেদ। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ইকরামুল হক টিটু এবং সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত অনেক কাছাকাছি এসেছিলেন। দলীয় কর্মসূচিতে একই সঙ্গে অংশ নিতেও দেখা গেছে তাদের। তবে দু’মাস আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সেই পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে। পুরোনো বিভেদ আবার প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। সংসদ নির্বাচনে সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান শান্ত। তার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন টিটুর বড় ভাই এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম। তখন থেকে স্পষ্ট দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। এবার সেই পুরোনো কোন্দল স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে।
নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটু (টেবিল ঘড়ি প্রতীক), এহতেশামুল আলম (ঘোড়া), সাদেকুল খান মিল্কী টজু (হাতি), ড. রেজাউল হক (হরিণ) এবং শহীদুল ইসলাম স্বপন মণ্ডল (লাঙল)। এ ছাড়া সাধারণ ৩৩ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩২টিতে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১৪৯ জন (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত একজন)। সংরক্ষিত ১১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ৬৯।