কুষ্টিয়ায় লুব অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্মকর্তার মৃত্যু ঘিরে রহস্য
পরিবারের দাবি পরিকল্পিত হত্যা

প্রতিকী ছবি
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৪ | ০০:০২
কুষ্টিয়ায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হয়েছে। তাঁকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে দাবি করছে পরিবার। তারা বলছে, হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হচ্ছে। তবে আমিরাত লুব অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের (৪০) মৃত্যুর সাত দিন পার হলেও হয়নি কোনো মামলা। স্বপ্রণোদিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও চালাচ্ছে না তদন্ত।
জানা গেছে, জাহাঙ্গীরের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর গ্রামে। তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের কমলাপুরে ভাড়া বাসায় থাকতেন। ৬ মার্চ বসতঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁকে। উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্ত্রী রুবিনা আক্তার বলেন, ঘটনার দিন সকাল ৮টার দিকে জাহাঙ্গীর বড় মেয়েকে মাদ্রাসায় দিয়ে আসেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘরে তালা দিয়ে তারা একসঙ্গে বেরিয়ে পড়েন। এ সময় জাহাঙ্গীর বলেন, ‘জাহিদ নামে আমিরাত লুব অয়েলের এক কর্মকর্তা ফোন করেছেন, তিনি এরিয়া ম্যানাজার। যশোর থেকে কুষ্টিয়ায় এসেছেন তাঁকে নিয়ে মার্কেটে যাওয়ার জন্য।’ এর পর জাহাঙ্গীর ওই কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করার জন্য যান এবং তাঁর স্ত্রী মেয়েকে আনার জন্য মাদ্রাসায় যান। ১২টার দিকে ফিরে এসে দেখেন, জাহাঙ্গীরের চাবিটি তালাবদ্ধ ঘরের বাইরে ঝুলছে। এ সময় তালা খুলে ভেতরে গিয়ে দেখেন ফ্যানের সঙ্গে রশিতে ঝুলছিলেন জাহাঙ্গীর। তাঁর মোবাইল ফোনটি টেবিলের ওপর ছিল। এ দৃশ্য দেখে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন এসে তাঁকে নামিয়ে হাসপাতালে নেন।
ছেলে হারিয়ে পাগলপ্রায় তাঁর বৃদ্ধ মা খাদিজা বেগম। তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরের ছোট মেয়ের বয়স ছয় মাস আর ছয় বছরের বড় মেয়েটি নার্সারিতে পড়ে। জাহাঙ্গীর ছোটবেলা থেকেই সহজ-সরল প্রকৃতির। ধর্মভীরু এই ছেলের সঙ্গে কারও বিরোধও ছিল না। আত্মহত্যা করার কারণ নেই। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাঁর হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দিতে হবে।
আমিরাত লুব অয়েলের এক কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে বলেন, ‘৬ মার্চ আমাদের এরিয়া ম্যানেজার কুষ্টিয়ায় যান। যাওয়ার পর জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়। দুজনের একসঙ্গে মার্কেটে যাওয়ার কথা থাকলেও তাদের মধ্যে আর সাক্ষাৎ হয়নি। অন্য একটি কোম্পানির এক কর্মকর্তা জাহিদকে ফোনে জানান, জাহাঙ্গীর আত্মহত্যা করেছে। এর পর আমাদের লোকজন হাসপাতাল ও তাঁর বাড়িতে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাহাঙ্গীর ২০২১ সালে আমাদের কোম্পানিতে যোগ দেন। তিনি আমাদের সেরা অফিসারদের মধ্যে অন্যতম। কাজের প্রতি শতভাগ মনোযোগী ছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কখনও কাজ বা অন্য বিষয় নিয়ে কারও টুঁ শব্দ হয়েছে– এমনটা আমাদের জানা নেই।’
নিহতের চাচা আবু হানিফ মিয়া বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আত্মহত্যা করতে পারে– এমন দাবি আমরা মেনে নিতে পারছি না। আত্মহত্যা করার মতো ছেলে নয় সে। এ ঘটনায় সঠিক তদন্ত জরুরি।’
এদিকে জাহাঙ্গীরকে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ করা হলেও থানায় অভিযোগ করেনি পরিবার। তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন নিহতের স্ত্রী রুবিনা।
কুষ্টিয়া মডেল থানার এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে জাহাঙ্গীরের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় আমি ছিলাম। এ বিষয়ে আমরা পরিবারের সদস্য ও কোম্পানির লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে হত্যার বিষয়ে কোনো তথ্য পাইনি। লাশটির ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’
- বিষয় :
- মৃত্যু রহস্য