মশার তাড়ায় ভাঙে নগর কর্তাদের ঘুম

ছবি: ফাইল
নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৪ | ০৬:০৪ | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৬:০০
ময়মনসিংহ নগরের ৩৩ ওয়ার্ডে অন্তত ১০ লাখ লোকের বাস। শীতের শেষে গরমের শুরুতে প্রতিবছরের মতো এবারও মশার হানা নগরে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই বেড়েছে মশা। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মশার যন্ত্রণায় ত্যক্ত-বিরক্ত সবাই।
নগর বিশ্লেষকরা বলছেন, সিটি করপোরেশনের শুধু ক্র্যাশ প্রোগ্রাম করে মাঝেমধ্যে মশা নিধনে কাজ করলে চলবে না; নিয়মিত কাজ চালিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে নাগরিকদেরও নিজেদের আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।
ভালো নেই নগরবাসী
নগরীর রামবাবু রোডের এক অফিসে কাজ করেন আল আমিন। তিনি বলেন, ‘শীত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মশা বেড়েছে দ্বিগুণ। এখন কয়েল জ্বালানো ছাড়া অফিসে বসা যাচ্ছে না।’ রামবাবু রোড বাইলেনের বাসিন্দা কাজল পাল গলির নর্দমার আবর্জনার স্তূপ দেখিয়ে মশার উপদ্রবের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, বাসাবাড়িতে দিনেও কয়েল ছাড়া থাকা যাচ্ছে না। শিশুদের সব সময় মশারির নিচে রাখতে হচ্ছে। সিটি করপোরেশন আবর্জনাও পরিষ্কার করে না, মশা মারার ওষুধও দিচ্ছে না। ’
মশা বাড়লে হুঁশ
মশার তীব্রতা বাড়ায় গেল ২৩ মার্চ থেকে নগরীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও মশক নিয়ন্ত্রণে ওয়ার্ডভিত্তিক ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৩ ওয়ার্ডে লার্ভিসাইড ও এডাল্টিসাইড প্রয়োগ করা হবে। নগরবাসীর অভিযোগ, মশার উপদ্রব বাড়লে নগর কর্তৃপক্ষের হুঁশ ফেরে, শুরু হয় তোড়জোড়। অন্য সময় কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না।
সিটি করপোরেশন মশক নিধন খাতে পাঁচ বছরের হিসাব ঘেঁটে দেখা যায়, এক বছর ছাড়া সব সময় এ খাতে বরাদ্দের চেয়ে খরচ হয়েছে কম। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ফগার মেশিন কেনা ও মেরামত, কীটনাশক কেনা, শ্রমিকদের মজুরি ও প্রচারণা খাতে বাজেট রাখা হয়েছে এক কোটি টাকা।
খাল-নালায় মাছ-ব্যাঙ ছেড়েও ব্যর্থ
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ক্লিনআপ বাংলাদেশে ২০২১ সালের ১১ জুন প্রায় ৫০ হাজার তেলাপিয়া ও খলিসা মাছের পোনা সিটি করপোরেশনকে উপহার দেয়। সেই মাছের পোনা মশক নিধনে ছাড়া হয়েছিল ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন নর্দমা ও খালে। তবে আবর্জনায় ভরা নর্দমা ও খালে নেওয়া উদ্যোগ পুরোটাই বিফলে গেছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন হাওলাদার বলেন, গত সেপ্টেম্বর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মশার বিস্তার সম্পর্কে জানতে একটি গবেষণা করা হয়। এ গবেষণায় দেখা গেছে, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির দিকে মশার বিস্তার কিছুটা কম থাকে। ফেব্রুয়ারির দিকে বাড়তে শুরু করে। গবেষণাটির এখনও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রস্তুত হয়নি।
সিটি করপোরেশনের খাদ্য ও স্যানিটেশন কর্মকর্তা দীপক মজুমদার বলেন, মশার প্রধান উৎপত্তিস্থল নর্দমা পরিষ্কার না থাকা এবং নর্দমায় পানি জমে থাকায় মশা বাড়ছে। নর্দমা পরিষ্কার রাখার জন্য নগরবাসীকে বারবার বলা হচ্ছে। শুধু সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষও যেন এগিয়ে আসে, এ প্রচারণা চালালেও সাড়া মিলছে না।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী বলেন, মশা তো উড়ন্ত প্রাণী। এক জায়গা ওষুধ প্রয়োগ করলে আরেক জায়গায় যায়। এই সময়টাতে মশা একটু বাড়ে। নর্দমায় নিয়মিত লার্ভিসাইড দিচ্ছি। উড়ন্ত মশার জন্য এডাল্টিসাইড প্রয়োগ করা হচ্ছে। আমাদের তরফ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।