ধর্মপাশায় ‘আপত্তিকর ভিডিও’ ছড়ানোর ফাঁদ

প্রতীকী ছবি
ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৪ | ২১:০৯
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরিচিত নারীর ফাঁদে পড়ে বিপাকে পড়েছেন সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার নানা শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা। সম্প্রতি অন্তত ৬ ব্যক্তির আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ওই নারী হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা। এতেও রক্ষা পাননি ভুক্তভোগীরা। তাদের দুর্বল মুহূর্তের ভিডিও-ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অনলাইনে।
কয়েকজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে জানা যায়, অচেনা নারী শুরুতে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় গড়ে তোলে। তারপর বার্তা আদান-প্রদান শুরু করে। একসময় সম্পর্ক গড়ে তোলে সে। এ সুযোগে ভিডিওকলে কথা বলা শুরু করে তারা। কিছুদিন পর কৌশলে আপত্তিকর ভিডিওচিত্র ও ছবি ধারণ করতে থাকে ওই নারী। এমনকি ভুক্তভোগীর আইডির পাসওয়ার্ডও হাতিয়ে নেয়। তখনই আসল রূপে দেখা দেয় সে। ভিডিও পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে বসে। না দিলে অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে টাকা পাঠাতে শুরু করেন ভুক্তভোগীরা। এতে কিছুদিনের জন্য স্বস্তি মেলে। পরে ওই নারী আরও কয়েক দফায় হুমকি দেয় টাকা দেওয়ার জন্য। টাকা না পেয়ে কারও কারও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, কয়েক বছর আগেই তারা এমন পরিস্থিতির শিকার হন। শুরুতেই মোটা অঙ্কের টাকা নিতে হয়েছে। নতুন করে টাকা না দেওয়ায় সম্প্রতি তাদের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লোকলজ্জার ভয়ে শুরুতে কেউ আইনি পদক্ষেপ নিতে চাননি।
এমন ঘটনার শিকার একজন পেশাজীবী মার্চের মাঝামাঝি নিজ এলাকার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তিনি নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত। সমকালকে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘এভাবে ফাঁদে পা দেওয়া ঠিক হয়নি। সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।’ পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায় কিনা– ভাবছেন তিনি।
পেশায় ব্যবসায়ী এক ব্যক্তির ভাষ্য, ‘ওই নারী মনে করেছিল, আমি অনেক ধনী। তাকে কয়েকবার টাকাও দিয়েছি।’ কিন্তু পরের দফায় টাকা চাইলে তিনি আর্থিক দুরবস্থার কথা জানান। এরপরই তাঁর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। অনেকবার বোঝানোর পর ওই নারী তাঁর পিছু ছেড়েছে।
স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারে অদক্ষতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি চক্র এভাবে ফাঁদে ফেলছে বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা। পাশাপাশি তারা এমন ঘটনার শিকার হওয়ার জন্য নৈতিক স্খলন, একাকিত্বসহ নানা কারণকে দায়ী করেন। এমন বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত নন গণমাধ্যমকর্মী শহিদুল ইসলাম শাহীন। তিনি এ থেকে রক্ষা পেতে ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন ব্যবহারে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান।
ধর্মপাশা থানায় এমন কোনো ভুক্তভোগী অভিযোগ বা জিডি করেননি বলে জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামসুদ্দোহা। তিনি প্রতিকার পেতে সাইবার ট্র্যাইবুনালে মামলা করার পরামর্শ দেন। তবে সবাইকে সচেতন হতেও বলেন।
- বিষয় :
- আপত্তিকর ছবি
- ভিডিও