ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

জলদস্যুর কবল থেকে মুক্তি

ফোনকলেই আঁতকে উঠতো বিপ্লবের স্বজন, আজ ঈদের আনন্দ

ফোনকলেই আঁতকে উঠতো বিপ্লবের স্বজন, আজ ঈদের আনন্দ

দুই ছেলে ও বাবার সঙ্গে নুসাইবা সোনিয়া। রোববার ফেনী সদরের মজলিশপুরে। ইনসেটে সোনিয়ার স্বামী বিপ্লব। ছবি: সমকাল

ফেনী সংবাদদাতা

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১৯:০৪ | আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১৯:২৭

‘জাহাজে থাকা ২৩ নাবিককে ১১ মার্চ জিম্মি করার পর থেকে কীভাবে যে দিন কেটেছে, তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।’ একদমে কথাগুলো বললেন উম্মে সালমা সোনিয়া। তিনি সোমালিয়ার জলদসুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ইলেক্ট্রিকেল ইঞ্জিনিয়ার ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ বিপ্লবের স্ত্রী। 

সোনিয়া আজ রোববার দুপুরে বলছিলেন, কারও ফোনে কল এলেই কোনো বিপদের খবর এসেছে– ভেবে তারা আঁতকে উঠতেন। 

সোনিয়ার বাবার বাড়ি ফেনী সদর উপজেলার মজলিশপুরে। সেখানেই বসেই সোনিয়া বলেন, ‘দিন-রাত যে কী আতংকের মধ্যে থাকতে হয়েছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। দুই দিন আগে সারা দেশের মানুষ পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করলেও আমাদের কাছে ঈদ বলে মনে হয়নি। রোববার ভোরে (স্বামীর) মুক্তির খবর পেয়ে মনে হচ্ছে আজ ঈদ হয়েছে।’

অল্প সময়ের মধ্যে জিম্মি নাবিক ও কর্মীদের মুক্ত করতে ব্যবস্থা নেওয়ায় সরকার ও জাহাজমালিকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এই গৃহবধূ।

বিপ্লবের (৩৬) বাড়ি জেলার দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের মোমারিজপুর গ্রামে। ওই গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন ভূঁইয়া-রৌশনারা দম্পতির বড় ছেলে তিনি। এ দম্পতির চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে বিপ্লবই পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি। 

৮ বছর পূর্বে জাহাজের চাকরিতে যান বিপ্লব। চার মাস আগে সর্বশেষ বাড়ি এসেছিলেন ছুটিতে। স্বজনের সঙ্গে এক মাস কাটিয়ে ফেরেন জাহাজে। ১১ মার্চ সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর ফোনে সবাইকে দোয়া করতে বলেন। 

বাংলাদেশে সময় শনিবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে ২৩ নাবিককে বন্দীদশা থেকে মুক্তির তথ্য নিশ্চিত করে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের মালিক কেএসআরএম গ্রুপ। এর পর থেকে নাবিকদের পরিবারে খুশির বন্যা বয়ে যায়।

বিপ্লব-সোনিয়া দম্পতির দুই ছেলে। ৬ বছর বয়সী বড় ছেলে রিদোয়ান বিন ইব্রাহিম প্রথম শ্রেণির ছাত্র। ছোট ছেলে রিহান বিন ইব্রাহিমের বয়স ৪। রোববার ফেনী সদরের মজলিশপুরে নানার বাড়িতে মা ও নানা ইব্রাহিম খলিলের পাশে বসেছিল রিদোয়ান। সে বলল, ‘জলদস্যুরা আমার আব্বুকে আটকিয়ে রেখেছে শুনে খারাপ লাগছিল। আব্বুর কথা সব সময় মনে পড়ে।’ ফোনে কল করলে তার বাবা চলে আসার কথা জানাতেন। অবশেষে দস্যুদের হাত থেকে বাবা ছাড়া পেয়েছে– শুনে খুব খুশি লাগছে তার।

রিদোয়ানের পাশ থেকে তার নানা ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘মেয়ের জামাই বিপ্লব অপহরণের পর থেকে আজ পর্যন্ত কি অবস্থায় ছিলাম, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’ তিনি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে জিম্মিদের মুক্ত করায় সরকার ও জাহাজমালিককে ধন্যবাদ জানান।

বিপ্লবের বাবা আবুল হোসেন ভূঁইয়া রোববার সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, ‘আমার ছেলে জলদস্যুদের হাত থেকে উদ্ধার হয়েছে শুনে আল্লাহর দরবারে লাখ শুকরিয়া জানাই। আল্লাহ যেন আমার ছেলেকে ফেরত আনেন। যেদিন সে আসবে, সেদিন আমাদের ঈদ হবে।’

মাতুভূঞা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, জলদস্যুদের হাত থেকে জিম্মি জাহাজ ও বিপ্লবসহ নাবিকদের উদ্ধারের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। সাংবাদিকদেরও এ জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য। 
 

আরও পড়ুন

×