ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

বোরো ধান কেটে হাওরেই বিক্রি, দামে খুশি কৃষক

বোরো ধান কেটে হাওরেই বিক্রি, দামে খুশি কৃষক

ফাইল ছবি

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ০০:৩৩

দিগন্ত ফসলি মাঠ। তাতে দোল খাচ্ছে বোরো ধান। পাকতে শুরু করেছে ধান। অনেক ক্ষেতে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। তবে ধান কাটা পুরোদমে শুরু হতে আরও ১০-১৫ দিন সময় লাগতে পারে। এসব ধান কাটতে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন।

নেত্রকোনায় আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। যেসব জমিতে আগে ব্রি-২৮ ধান চাষ করা হয়েছে, সেসব আগাম পেকে গেছে। এসব ধান কেটে মাঠেই বিক্রি করছেন চাষিরা। তবে ব্রি-২৮ জাতের পরিবর্তে ব্রি-৮৮ ধান আবাদ হয়েছে বেশি। কারণ ব্রি-২৮ জাতের কার্যকারিতা আগের মতো নেই বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদরা। ব্রি-৮৮ ধানও কিছু কিছু কাটা হচ্ছে।
নেত্রকোনার হাওর উপজেলা মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরীর কোনো কোনো এলাকায় পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে। পুরোদমে ধান কাটা শুরু হতে আরও ১০-১৫ দিন লাগতে পারে। হাওরের ধান কাটার জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৭৩০টি কম্বাইন হারভেস্টার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে চলতি মৌসুমে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার ৯৭০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৮১ হাজার ৭৭ টন ধান। আবাদ হয়েছে ৪১ হাজার ৭০ হেক্টর। সম্ভাব্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টন ধান। সম্ভাব্য মূল্য ধরা হয়েছে ৮৪৬ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে সাত শতাংশ ধান কাটা হয়েছে।
মোহনগঞ্জের ডিঙাপোতা ও খালিয়াজুরীর রসুলপুর হাওর ঘুরে দেখা গেছে, হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন কৃষক। হাওরেই উৎপাদিত ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা। দামও বেশ ভালো। 

মোহনগঞ্জের বেথাম গ্রামের কৃষক জাহেদ মিয়া বলেন, ‘আমার ৮ কাঠা জমিতে ৮০ মণ ধান হয়েছে। এক হাজার টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করেছি।’ একই গ্রামের দুলাল মিয়া বলেন, ‘১০ কাঠা জমিতে ধান লাগাইছিলাম। দামও ভালো পাইছি। আর কয়েক দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে সুন্দরমতো ধান ঘরে তোলা সম্ভব হবে।’
খালিয়াজুরী উপজেলার রসুলপুরের কৃষক আবদুল খালেক বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে ধান পাইক্যা গেছে। কাটাও শুরু হয়েছে।’ 
কিছু দিনের মধ্যেই হাওরের বোরো ধান কাটা পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে। বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলে মনে করেন কৃষক আলফাজ উদ্দিন।

কথা হয় নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামানের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, আগাম জাতের বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে সাত শতাংশের মতো ধান কাটা হয়ে গেছে। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে বোরো কাটা শুরু হয়ে যাবে। এখন তেমন বৃষ্টির দরকার নেই। কারণ ঝড়বৃষ্টি হলে ধান গাছ মাটিতে পড়ে যাবে এবং ক্ষতি হবে। জেলায় এবার সর্বোচ্চ ৭৩০টি কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা হবে। এসব মেশিনের অধিকাংশ এলাকায় পৌঁছে গেছে। এ ছাড়া নিয়মিত, অনিয়মিত ও বহিরাগত মিলে প্রায় ১৬ হাজার ৭০০ শ্রমিক নেত্রকোনায় বোরো কাটবেন।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান বলেন, নেত্রকোনা জেলায় এবার সব ডুবন্ত ফসল রক্ষা বাঁধ যথাসময়ে সংস্কার করা হয়েছে। তাই এবার আগাম বন্যায় বোরো ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ জানান, হাওর এলাকা পরিদর্শন করেছেন। যথাসময়ে কৃষক যাতে ধান কাটতে পারেন তার ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বড় কোনো দুর্যোগ না হলে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হবে।

আরও পড়ুন

×