আগুনে শেষ ফল চাষির স্বপ্ন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় চণ্ডীপুরে পুড়িয়ে দেওয়া ফলের বাগান। ছবিটি বুধবার বিকেলে তোলা সমকাল
এ কে এস রোকন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ২৩:২৭
শিবগঞ্জ পৌর এলাকার শিক্ষিত যুবক মাসুদ রানা। নিজের সঞ্চয় দিয়ে নাচোলে ৫০ বিঘা জমি দীর্ঘমেয়াদে ইজারা নিয়ে গড়ে তুলেছেন আমসহ বিভিন্ন ফলের বাগান। এ বছর বিরূপ আবহাওয়ার কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অধিকাংশ গাছে ৪০ শতাংশ আম এসেছে। তবে মাসুদেরটিসহ নাচোলের বাগানগুলোয় আম এসেছে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। তিন বছরের খাটুনির পর এবার ভালো ফল পেতে যাচ্ছেন বলে আশা করছিলেন তিনি। তবে আগুনে তাঁর সে স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, শত্রুতার জেরে গত মঙ্গলবার পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর বাগানের দেড় শতাধিক আম ও পেয়ারা গাছ। পাশের গম ক্ষেতের দেওয়া আগুন থেকে আম ও পেয়ারা গাছ পুড়ে যায়। এ সময় গাছে থোকায় থোকায় ধরে থাকা ফলও পুড়ে গেছে। তিনি এসে পোড়া গাছ দেখে ভেঙে পড়েন। দায়ীদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
আগুন দেওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। গত ১৮ এপ্রিল একই উপজেলার শিংরইলে আরও একটি আমবাগানে আগুন দেওয়া হয়। শিবগঞ্জের রানীহাটি গ্রামের জুয়েল ও লুৎফর নাচোল উপজেলার নওদাপাড়ায় ৪০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে আম বাগান গড়ে তোলেন। গত ১৭ এপ্রিল রাতে ফলসহ ৪০০ আম গাছ পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় জমসেদ ও ওবায়দুলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পরদিন জুয়েল থানায় অভিযোগ করেন।
এ ধরনের ঘটনায় লিজ নিয়ে ফলের বাগান বা সমন্বিত কৃষি খামার করা উদ্যোক্তারা উদ্বেগে রয়েছেন। স্থানীয় আম চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, তারা বিষয়টি জানার পর ক্ষতিগ্রস্ত বাগান ঘুরে দেখেছেন। ফল আসার পর এমন ঘটনা পরিকল্পিত এবং জঘন্য অপরাধ। এতে তারাও আতঙ্কিত।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার ভোরে মাসুদ রানার বাগানের পশ্চিমে একটি ক্ষেতে গম কাটার পর উচ্ছিষ্টাংশে আগুন দেওয়া হয়। সে আগুন বাগানে ছড়িয়ে পড়ে। মাসুদ রানার ভাষ্য, তিনি শিবগঞ্জ থেকে নাচোলে এসে ১০ বছরের জন্য ৫০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে ফলের চারা রোপণ করেন। তিন বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগের পর এবার ফল এসেছে। জেলায় ফলন খারাপ হলেও তাঁর বাগানে পর্যাপ্ত আম আসায় স্বপ্ন বুনছিলেন। কিন্তু আগুনের কারণে লোকসানে পড়বেন তিনি। এভাবে বারবার আগুন লাগানো হলে পথে বসতে হবে।
নাচোল ধানের এলাকা হিসেবে পরিচিত থাকলেও বাইরের তিন শতাধিক উদ্যোক্তা প্রায় এক হাজার বিঘা জমি ইজারা নিয়ে আমসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন। এমন তথ্য জানিয়ে কানসাটের আম চাষি ও নাচোলে সমন্বিত ফল বাগানের মালিক রিপন কুমার রায় বলছিলেন, সব খামারই অন্তত ১০ বছরের জন্য ইজারা নেওয়া। এ অবস্থা চলতে থাকলে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ তুলে নিতে বাধ্য হবেন। পরপর দুটি ঘটনায় অন্তত ১১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাগানের পাশের জমির মালিক কৃষক কবির আলী নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে পাশের ক্ষেতের কেনু আলী ও আবু তালেবের ওপর দোষ চাপান। তাঁর অভিযোগ, আবু তালেবের জমিতে লাগানো আগুন তাঁর জমির গমের উচ্ছিষ্টাংশ পুড়ে মাসুদের বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আবু তালেবের দাবি, তিনি শিবগঞ্জে বাস করেন। তাঁর পক্ষে নাচোলে গিয়ে আগুন লাগানো অসম্ভব। একই ধরনের কথা বলেছেন কেনু আলীও।
প্রশাসনকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করার অনুরোধ জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। এলাকায় ফলের বাগানের জন্য বিনিয়োগ বাড়লেও এ ধরনের অপরাধের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন নাচোল ফল চাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমান। তিনি অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানান।
এ বিষয়ে নাচোল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ১৮ ও ২৩ এপ্রিল বাগান পোড়ানোর দুটি অভিযোগ এসেছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। দায়ীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।
- বিষয় :
- চাষী